গত তিন দিন ধরেই টানা বৃষ্টি চলছে পাহাড়, তরাই -ডুয়ার্সে। তার জেরে শনিবার রাত থেকেই তিস্তা -সহ উত্তরবঙ্গের নদীগুলির জল বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। রবিবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতে। এ দিনই নদীর জল ঢুকে ডামডিম ও বাগরাকোটের মাঝে রেললাইনে ধস নেমে শিলিগুড়ি -মালবাজার শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় মালবাজার মহকুমার গজলডোবা এলাকায় ১৬৭ মিলিমিটার, সেবকে ১০৩ মিলিমিটার, মালবাজারে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “মৌসুমী অক্ষরেখা উত্তর দিকে সরে আসাতেই বৃষ্টি হচ্ছে। আপাতত উপগ্রহ -চিত্র মারফত পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি চলবে।” |
ফুলহার নদীর জল এ দিন দুপুর থেকে বাড়ায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের বেশ কিছু এলাকায় করলা নদীর জল ঢুকে পড়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের ১, ৩, ৫ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। শনিবার রাতেই নেতাজিপাড়া, দিনবাজার, বয়েলখানাবাজার, রায়কতপাড়া, সেনপাড়া, ইন্দিরা কলোনিতে জল ঢুকে পড়ে। মাঝরাতে মাইক নিয়ে প্রচার করে করলার দু’পাশের বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে পুরসভা এবং প্রশাসন। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “রাত থাকতেই জলবন্দি বাসিন্দাদের উদ্ধার করা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে অতিরিক্ত ত্রাণ চাওয়া হয়েছে। পরিস্থতির কথা ভেবে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত করছে পুরসভাও।” |
বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতে বাসিন্দাদের
সঙ্গে কথা বলছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি। |
সেচ দফতরের মহকুমা আধিকারিক কেশব রায় বলেন, “একে বৃষ্টিতে জল বাড়ছে। তার উপরে তিস্তা থেকেও জল ঢুকছে করলায়। সে কারণেই জলপাইগুড়ি শহরে করলা নদীর জল ঢুকে পড়েছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের আমিনপাড়া, নিজতরফ এবং লাগোয়া এলাকায় তিস্তার জল ঢুকে কয়েকশো বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। মেখলিগঞ্জের বিডিও সপ্তর্ষি নাগ বলেন, “ইতিমধ্যে ২১৬ জন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।” প্রবল বৃষ্টিতে ৩১ ডি জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিলিগুড়ি -জলপাইগুড়ির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। |
ওদলাবাড়ির বন্যাদুর্গত এলাকায় এ দিন সকালে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। নয়াবস্তি, চুইয়াবস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মানাবাড়িতে যেখানে ঘিস নদীর বাঁধ ভেঙেছে, সেই এলাকা ঘুরে দেখেন। বাঁধ মেরামতি নিয়ে সেনা -কর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। পরে ওদলাবাড়ি ইউনিয়ন ক্লাবে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক করেন মন্ত্রী। |