ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে পরিবহণমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যোগ দিলেন না বেসরকারি বাস মালিকদের দু’টি সংগঠন, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতারা। এর ফলে, আজ, সোমবার থেকে রাজ্য জুড়ে প্রায় ২২ হাজার বেসরকারি বাস ও দূরপাল্লার বাস রাস্তায় নামবে না বলেই আশঙ্কা। যদিও বৈঠকের পরে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র আশ্বাস দিয়েছেন, “সাধারণ মানুষ যাতে অসুবিধেয় না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে সরকারি বাস, মিনিবাস এবং ট্যাক্সি চালানোর ব্যবস্থা করছি।”
একই সঙ্গে বেসরকারি বাস মালিকদের হুমকি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ইচ্ছুক শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইলে তাঁদের কিন্তু চালাতে দিতে হবে।” এ ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী যা-ই বলুন, বিপুল সংখ্যক বেসরকারি বাস পথে না নামলে অতিরিক্ত বাস চালিয়েও সরকার যাত্রীদের দুর্ভোগ কতটা কমাতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান সব মহলই।
পরিবহণমন্ত্রীর বৈঠকে না যাওয়া বেসরকারি বাস মালিকদের দু’টি সংগঠন জানিয়ে দিয়েছে, সোমবার থেকে ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা রাস্তায় বাস নামাবেন না। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, ভাড়া না বাড়ালে কোনও বাস-মালিকের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব নয়।” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “আমরা ধর্মঘটে যাচ্ছিই। তাই মন্ত্রীর বৈঠকে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।”
বেসরকারি বাস মালিকদের দু’টি ইউনিয়ন হাজির না থাকলেও এ দিন পরিবহণ মন্ত্রীর বৈঠকে হাজির ছিলেন মিনিবাস, ট্যাক্সি এবং ট্রাকের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। সোমবার মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক আছে। ১৮ তারিখ আমাদের
দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আছে। ১৯ তারিখ মন্ত্রিসভার বৈঠক আছে। তার আগে আমি সব সংগঠনকেই ধৈর্য ধরতে বলেছি।”
‘ধৈর্য’ ধরলেও ডিজেলের দাম না-কমলে এবং সরকার ভাড়া বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত না-নিলে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটে যেতে তাঁরা বাধ্য হবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অবশেষ দাঁ বলেন, “১৯ তারিখ অবধি অপেক্ষা করার পরে পরিস্থিতি একই রকম থাকলে আমরা আন্দোলনে যাব।”
বেঙ্গল ট্যাক্সি ইউনিয়ন, কলকাতা ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন-সহ ছ’টি সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তাঁরা ২০ তারিখ ভোর ছ’টা থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূলের অবস্থান দেখার পরে আগামী ১৯ তারিখ তাঁরা এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র দুই নেতা রাজদেও গোয়ালা এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়। পরে সুভাষবাবুরা বলেন, “মন্ত্রী তো বাস এবং পরিবহণের বিভিন্ন মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের এই বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানে আমাদের কেন ডেকেছিলেন, বুঝলাম না! তবে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, সরকারের উচিত ডিজেলের উপর থেকে অতিরিক্ত কর তুলে নেওয়া। তা হলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে।”
সিএসটিসি এবং সিটিসি কর্তৃপক্ষের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে শহরে এবং দূরপাল্লায় কিছু বেশি বাস চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। যদিও বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য সেই চেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে কর্তারা যথেষ্ট সংশয়ে। |