বর্ধিত রাজ্য কমিটি
‘অবান্তর’ সদস্য কমাই ভাল, স্পষ্ট বলে দিলেন বুদ্ধদেব
ক্ষমতা হারানোর পরে একের পর এক গণসংগঠনের সদস্যসংখ্যা কমছে হু হু করে। সেই প্রবণতা নিয়ে ‘উদ্বেগ’ও শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের রাজ্য কমিটি ও জেলার নেতাদের সামনে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্পষ্টই বলে দিলেন, ‘অবান্তর’ সদস্য কমে যাওয়াই ভাল!
কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে দু’দিন ধরে সমস্ত জেলা ও গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনার পরে রবিবার জবাবি বক্তৃতা করতে গিয়ে বুদ্ধবাবু ফের স্পষ্টই বলেছেন, ‘অবাঞ্ছিত’দের তাড়াতেই হবে! ছোট কিন্তু খাঁটি দল এই সহজ দর্শনের কথাই এ দিন বৈঠকের অন্দরে শোনা গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেছেন, গণসংগঠনের সদস্য উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। যে গরিব মানুষ বামপন্থীদের দিক থেকে সরে গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে এখনও ফিরিয়ে আনা যায়নি। কেন এই ‘বিচ্ছিন্নতা’, তার কারণ খুঁজে বার করার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বুদ্ধবাবু।
সিপিএম সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন জোটের দিকে যে ৩৫ লক্ষ মানুষ বেশি আছেন, সেই তথ্য মাথায় রেখেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে নামার কথা বলেছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর মতে, গরিবের কাছেই আগে যেতে হবে। ক্ষমতায় থাকার সময়ে গরিবের মধ্যেও যে ‘বিভাজন’ বামেরা ঘটিয়ে ফেলেছিল, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলেছেন। আর দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু তাঁর জবাবি ভাষণে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘ধৈর্যশীল’ হওয়ার। রাজ্যে মানুষের মধ্যে যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তাকে কাজে লাগানোর জন্য ‘ধৈর্য ধরে সংগ্রাম’ চালানো জরুরি। আন্দোলনের পথ এবং জনতাকে সমবেত করা, এই দুইয়ে মিলে ‘গণপ্রতিরোধে’র দাওয়াই বাতলেছেন বুদ্ধবাবু।
বস্তুত, তৃণমূলের জমানায় বিরোধী বামেদের জন্য ধীরে ধীরে কিছু ‘ইতিবাচক’ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বুদ্ধবাবুরা। বামেদের সাম্প্রতিক নানা জমায়েতে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে বলে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধবাবু। পাশাপাশিই দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ার বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনেছেন, যেখানে শাসক দলের ভোট কমাতে পেরেছিল সিপিএম। তবে এই ‘ইতিবাচক ইঙ্গিতে’র মধ্যেও দলের ভাবমূর্তি যে এখনও কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছয়নি, বুদ্ধবাবুর বক্তব্যে এ দিন সেই উদ্বেগই ধরা পড়েছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
জনমানসে যাঁদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে, সিপিএমের সেই সব জেলার নেতাদের একটি বড় অংশই দু’দিন ধরে বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুদের সামনে হাজির থেকে তাঁদের মতামত রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে গিয়েছেন। জামিনে মুক্ত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ যেমন পূর্ব মেদিনীপুরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। আর এক জেল-ফেরত বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ এ দিনই পেশ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘরছাড়াদের সমস্যার চিত্র।
বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে ১৮টি জেলা এবং সবক’টি গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের অধিকাংশই অবশ্য আন্দোলন-বিমুখতার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের দিকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, একের পর এক ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিরোধী আসনে-থাকা বামেরা ‘তুলকালাম’ করতে পারছে না! বাম জমানার ৩৪ বছরে কী হয়েছিল, এই প্রশ্নের ভয়ে দল মাঠে নামতে দ্বিধায় ভুগছে কি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিমানবাবুরাও অবশ্য সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করেছেন। ডিজেল, গ্যাস, এফডিআই-প্রশ্নে রাজ্যে বৃহস্পতিবার একটি আস্ত সাধারণ ধর্মঘটের ডাক তো দিয়েছেনই, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলির দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে মাঠে নামার কথা বলেছেন। মহিলাদের উপরে লাগামহীন আক্রমণ এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে লাগাতার রাস্তায় থাকার ডাকও দেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.