তিন বছরের মধ্যে একই রাস্তার উদ্বোধন হল দু’বার করে।
অশোকনগর এবং হাবরার মধ্যে ১২ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তাটি ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু। শনিবার সেই একই রাস্তার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু যে কারণে এই রাস্তা নির্মাণ, এখনও সেই সমস্যার সমাধান হল না।
যশোহর রোডের যানজট এড়াতে ১৯৯৩ সালে বামফ্রন্ট পরিচালিত অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এবং হাবরা পুরসভা বাইপাসটি তৈরির পরিকল্পনা করে। রাস্তাটি তৈরি হওয়ার পরে নামকরণ করা হয় অশোকনগরের প্রয়াত সিপিএম বিধায়ক ননী করের নামে। এখন দু’টি পুরসভাতেই ক্ষমতায় তৃণমূল। নতুন ভাবে রাস্তাটির উদ্বোধনের সঙ্গে পাল্টে দেওয়া হল নামও। এ বার রাস্তার নাম হল ‘অশোকনগর-কল্যাণগড়-হাবরা বাইপাস’।
এ ভাবে একই রাস্তার দ্বিতীয় বার উদ্বোধনের পক্ষে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্তের দাবি, “২০১০ সালের পুর নির্বাচনের আগে সিপিএমের পুরবোর্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাইপাস রাস্তটির কাজ শেষ না করেই উদ্বোধন করে। এ বার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে উদ্বোধন করা হল।” একই দাবি পুরমন্ত্রীও। |
সমীরবাবুদের এই উদ্যোগকে অবশ্য ‘জালিয়াতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন ওই পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের শর্মিষ্ঠা দত্ত। তাঁর দাবি, “পুরবোর্ডে থাকাকালীন বাইপাসটির কাজ সম্পূর্ণ শেষ করেই আমরা উদ্বোধন করেছিলাম। সেই ফলকটাও এখনও রয়েছে। তৃণমূল রাস্তার উদ্বোধনের নামে জালিয়াতি করল।” রাস্তাটির নতুন নামকরণও মেনে নিতে পারেননি শর্মিষ্ঠাদেবী। তিনি বলেন, “ননীবাবুর নাম এ ভাবে মুছে ফেলা যাবে না। এটা ঘৃণ্যতম কাজ হয়েছে। আমরা আবার ক্ষমতায় ফিরলে বাইপাসটি আবার ননীবাবুর নামেই করব।” স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, হাবরার দিকে রাস্তা তৈরির কাজ কিছুটা বাকি থেকে যায় বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে।
অশোকনগরের শেরপুর কালীবাড়ি মোড়, দেবীনগর, বনবনিয়া, ডহরথুবা, আয়রা হয়ে রাস্তাটি হাবরা পুরসভার বেলঘড়িয়া মোড়ের কাছে যশোহর রোডে মিশেছে। ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ কিলোমিটার হল অশোকনগরে, বাকি ৫ কিলোমিটার পড়ছে হাবরায়। যশোহর রোডের উপরে যানবাহনের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যেই বাইপাসটি বানানো হয়। কিন্তু এখনও যানজট সমস্যা মেটেনি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইপাসটি ততটা চওড়া নয়। পাশাপাশি দু’টি বড় গাড়ি যেতে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, বাইপাসের মধ্যে কয়েকটি বাজার এলাকা থাকায় যানজট এড়ানো যাচ্ছে না। সমস্যার কথা পুরমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলে জানান সমীরবাবু। পুরমন্ত্রী বলেন, “চেয়ারম্যানকে বলেছি জমি দেখতে। জমি পাওয়া গেলে বাজার এলাকাকে এড়িয়ে একটি রাস্তা তৈরি করে তা বাইপাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।”
বাইপাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পুরমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় প্রমুখ। এ দিন পুরমন্ত্রী হাবরার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘কলতান’-এর মঞ্চেরও উদ্বোধন করেন। খ্রিস্টানদের একটি সংস্থা এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য ২৯ কাঠা জমি দান করে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ২০০১ সালে। ২০০৩ সালে তৎকালীন তৃণমূল-বিজেপি নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড পুর নির্বাচনের আগে কেন্দ্রটির উদ্বোধন করলেও মঞ্চটি তৈরি হয়নি। হাবরার চেয়ারম্যান তপতী দত্ত বলেন, “এই মঞ্চ নিয়ে হাবরার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমরা তৃপ্ত।” চেয়ারম্যান প্রকল্প তৈরি করলে মঞ্চটিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়ার আশ্বাস দেন পুরমন্ত্রী। |