‘সচিন খেলে যাচ্ছে কি এনডোর্সমেন্টের জন্য? জানি না বাবা’
প্রশ্ন তুললেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আসিফ আলি জারদারির রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হঠাৎ করে মিয়াঁদাদ এখন পাকিস্তান বোর্ডের সর্বময় কর্তা। রোববার দুপুরে টিমের সঙ্গে প্র্যাক্টিসে যাওয়ার আগে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে। বহু বছর বাদে ভারতীয় প্রিন্ট মিডিয়াকে দেওয়া তাঁর প্রথম ইন্টারভিউ!

প্রশ্ন: হঠাৎ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাজারে আপনি। আমাদের কাগজে দু’দিন আগে কলম্বো থেকে পাকিস্তান প্র্যাক্টিসে আপনার ছবি বার হয়েছে। আপনি নাকি টিমের নবতম ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ?
মিয়াঁদাদ: ধুর, মিডিয়ায় যত সব ফালতু বেরোয়। আমি ব্যাটিং পরামর্শদাতা হতে যাব কোন দুঃখে! আমি হলাম গিয়ে পাকিস্তান বোর্ডের ডিরেক্টর জেনারেল অব ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেট পরিকাঠামো আমি ঠিক করি। মডেল গড়ি।

প্র: কালকের ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে কী ভাবছেন? জেতাটা নিশ্চয়ই খুব আত্মবিশ্বাস দেবে দলকে?
মিয়াঁদাদ: আমি কালকের ম্যাচ নিয়ে খুব আলোড়িত নই। দিনের শেষে প্র্যাক্টিস ম্যাচ। আমি চাইব যত পারে পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিক কালকের ম্যাচে। টুর্নামেন্টে তাড়াতাড়ি ছিটকে গিয়ে কাল জিতলাম তার মূল্য কী? আমি এ সব ইগো ট্রিপে বিশ্বাসী নই। টুর্নামেন্টটা বড়ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি। ওটাতে ভাল খেলতে হবে।

প্র: ইদানীং পাকিস্তান এই ম্যাচে খুব নড়বড়ে থাকে। আপনাদের আমলে ঠিক উল্টো ছিল। শারজা-টারজা যেখানে খেলা হত, এক বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে সব সময় পাকিস্তান জিতত। এখন ভারত জেতে।
মিয়াঁদাদ: আমি বলব বছরের শেষের জন্য হিসেবটা তোলা থাক। এ বছর তো আরও কিছু ইন্দো-পাক ম্যাচ হবে। তার পর না হয়, হিসেবটা করা যাবে।

প্র: সেই সময়ের পাকিস্তান টিমে অনেক গণ্ডগোল ছিল। কিন্তু মাঠে ইমরানের ক্যাপ্টেন্সিতে সবাই এক হয়ে খেলত। অথচ এখন পাকিস্তান টিম নিয়ে ম্যাচ গড়াপেটা থেকে স্পট ফিক্সিং—কেবল নেগেটিভ বিতর্ক।
মিয়াঁদাদ: আমাদের সময় মাইন্ড সেটটাই অন্য রকম ছিল। এ সব ভাবনা আসত না।

প্র: আপনার আর ইমরানের মধ্যে এত সমস্যা ছিল। কিন্তু মাঠে দেখে সেটা বোঝা যেত না।
মিয়াঁদাদ: অ্যাঁ, মাঠে দেখে বোঝা যেত না? আমার আর ইমরানের মধ্যে সদ্ভাব নেই? মন দিয়ে দেখতেন তো (হাসি)!


প্র: ওকে.। আপনি খেলা ছাড়ার পর বইতে লিখেছিলেন রাজনৈতিক জীবনে ইমরানের সঙ্গে পার্টনারশিপ করবেন। সামনে তো নির্বাচন আসছে!
মিয়াঁদাদ: ডিফিকাল্ট। আমি অরাজনৈতিক একটা মানুষ। বিরোধী থেকে শাসক, সব দল আমার কাছের। সবাই আমায় আদর করে ডাকে মিয়াঁদাদ। হঠাৎ করে আমি কোনও একটা দিকে যাব কী করে? সম্ভব নয়।

প্র: ইমরানের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আপনার কী ধারণা। এই যে আঠারো বছর ধরে আপনার ‘বন্ধু’ নাগাড়ে পড়ে রয়েছেন।
মিয়াঁদাদ: ও আছেআছে। কে খেলা ছাড়ার পর কী করবে সেটা তো তার ব্যাপার। কেউ গল্ফ খেলে। কেউ কোচিং করে। কেউ রাজনীতি করছে।

প্র: আপনি এই যে বোর্ডটা হাতে নিলেন। কী করবেন ক্রিকেট প্রশাসনে?
মিয়াঁদাদ: দেশি ট্যালেন্টদের সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করব। এই যে সব বিদেশিগুলো আমাদের উপমহাদেশে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, বন্ধ হওয়া দরকার। সাহেবগুলোকে যে আমরা ল্যা ল্যা করে নিয়ে আসি, ওরা কি আমাদের চেয়ে বেশি জানে? ওরা হল থিওরিওয়ালা। কেবল থিওরি কপচায়। আমাদের কাছে আসল জিনিসটা আছে, স্বাভাবিক প্রতিভা। সমস্যা হল ওদের আমরা জামাই আদর করে নিয়ে আসছি, ওরা থিওরির সঙ্গে কিছু কিছু প্রতিভার দিকটাও শিখে ফেলছে। আমাদের কোচেদের কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

প্র: আপনি এত কথা বলছেন। আপনার নিজের কোচই তো অস্ট্রেলিয়ান।
মিয়াঁদাদ: আমি কোনও নির্দিষ্ট দেশ নিয়ে বলছি না। সাধারণ ভাবে বলছি। এই যে গ্রেগ চ্যাপেলকে আপনারা আনলেন—আমায় বলুন তো, কী পেলেন? ও কী এমন শেখাল যেটা গাওস্কর বা শাস্ত্রী শেখাতে পারত না! ফালতু যত সব। উল্টে সব ঘেঁটে দিয়ে গ্রেগ চ্যাপেল চলে গেল। এদের মাথায় তুলতে গিয়ে উল্টে আমরা নিজেদের ট্যালেন্ট হারাচ্ছি। এই যে সাকলাইন! ও তো চলে গেল বাংলাদেশে। দেশে থাকলে পাকিস্তানের উপকার হত।

আমাদের সময় চিন্তাটিন্তা করে রিটায়ার করতে হত না। ফাস্ট বোলাররা এমন চড়াও হত যে ওরাই যেন বলে দিত, যাঃ এ বার বেরো। মানে মানে রিটায়ার কর। এখন সেই সব বোলার কোথায়? এক-আধজনকে ম্যানেজ করতে পারলেই রিটায়ার না করে থাকা যায়।

প্র: বিশ্ব ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে বড় বিতর্ক সচিন তেন্ডুলকরের অবসরের উপযুক্ত নির্ঘণ্ট। আপনার কী মনে হয়?
মিয়াঁদাদ: সচিনের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ও নিজে কী ভাবছে, ওর শরীর কী বলছে, সেটা আমি কেমন করে বলব।

প্র: খুব নিরাপদ উত্তর হল। জাভেদ মিয়াঁদাদ লোকটা কি বদলে গেল নাকি? সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উত্তর।
মিয়াঁদাদ: ষোলো-সতেরো বছর বয়সে ফটফট করা মানাত। এখন ছাপ্পান্ন হতে যাচ্ছে বয়স। এখন কী করে ফ্লিক মারব। এখন এ রকমই হালকা ‘পুশ’-এর সময়। বয়সের একটা ধর্ম আছে না!

প্র: ধুর, মিয়াঁদাদের আবার বয়সের ধর্ম কী। বলুন না। আপনি মনে করুন অজিত তেন্ডুলকর। কী পরামর্শ দিতেন ছোট ভাইকে?
মিয়াঁদাদ: দেখুন ভাই, এখন তো ক্রিকেট খেলাটাই বদলে গেছে। একটু বল এ দিক ও দিক করলেই ব্যাটসম্যান কমপ্লেন করতে শুরু করে। বাবুদের ডিজাইনার পিচ চাই সব সময়। আর টিমগুলোর বোলিং স্ট্যান্ডার্ডও কত খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের সময় চিন্তাটিন্তা করে রিটায়ার করতে হত না। ফাস্ট বোলাররা এমন চড়াও হত যে, ওরাই যেন বলে দিত, যাঃ এ বার বেরো। মানে মানে রিটায়ার কর। এখন সেই সব বোলার কোথায়? এক-আধজনকে ম্যানেজ করতে পারলেই রিটায়ার না করে থাকা যায়।
জানি না সচিন কী ভাবছে। এন্ডোর্সমেন্ট আর একটা কারণ হতে পারে। আমার এক বার মনে হচ্ছে সচিনের নিশ্চয়ই টাকার দরকার নেই। আবার পরমুহূর্তে ভাবছি, স্পনসরদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি কারণ হতেই পারে। হয়তো যেগুলো হাতে রয়েছে বলে ভাবছে। টানছে নিজেকে। জানি না বাবা।

প্র: আপনার মতটা সাফ বলুন না।
মিয়াঁদাদ: আমার মত হল জনতা কী চাইছে সেটাও সচিন ভেবে দ্যাখো। ওরা তোমায় হিরো হিসেবে দেখে এত বছর সঙ্গে থেকেছে। সেই সেন্টিমেন্টটাও খেয়াল রাখতে হবেওটা যেন বদলে না যায়!

প্র: সেই ষোলো বছর বয়সে সচিনকে আপনি তো শিয়ালকোটে খেলা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওয়াকারের বল ওঁর নাকে লাগার পর রসিকতা করেছিলেন, বাছা, দেখলে তো। স্কুলের হোমটাস্ক করো গিয়ে। এ সবের মধ্যে থেকো না।
মিয়াঁদাদ: হ্যাঁ (হাসি)। ছেলেটা কিন্তু অত রক্ত পড়ার পরেও প্যাভিলিয়নে ফেরেনি। পরের বলটাই বাউন্ডারি মেরেছিল। আমি সে দিনই জানতাম ইন্ডিয়া এমন প্রতিভার খোঁজ পেয়ে গেল, যে অসম্ভব সাহসী। যুদ্ধ থেকে পালায় না। সচিন তেন্ডুলকরকে সে দিনই প্রথম নম্বর দিই।
তাই অবসর নিয়ে কী করবে ওর ওপর ছেড়ে দিতে চাই।

প্র: আবার নিরাপদ থাকতে চাওয়াসব বলেটলে।
মিয়াঁদাদ: বললাম না, ছাপ্পান্ন হতে যাচ্ছি শিগগির।

প্র: কাল ম্যাচে থাকছেন তো?
মিয়াঁদাদ: না দুপুরে দেশে ফিরে যাচ্ছি।

প্র: সে কী?
মিয়াঁদাদ: হ্যাঁ, টিভিতে দেখব ছেলেরা কী করছে। কলম্বো বসে থাকার কী আছে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.