ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ষাট বছরের ইতিহাসে কেউ কখনও দেখেছে! না শুনেছে!
কী কাণ্ড যে, সোমবার ভরদুপুরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের টক্কর দেখার জন্য কোনও টিকিটের ব্যবস্থা নেই। প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে যেমন খুশি এলেই হল। ফার্স্ট কাম-ফার্স্ট সার্ভ পদ্ধতিতে লোক বসানো হবে। কার স্টিকারের খোঁজ করতে গিয়ে শুনলাম সেটারও নাকি এ ম্যাচে ব্যবস্থা নেই। গো অ্যাজ ইউ লাইক।
রোববার তাজ সমুদ্র হোটেলের ব্রেকফাস্ট লাউঞ্জ থেকে যে দুই বঙ্গসন্তানকে সামান্য বিবর্ণ মুখে বার হতে দেখলাম, তাদের খুশি করার রাস্তা কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাতে রয়েছে। তিনি ও প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ যদি একমত হন, অনুশীলন ম্যাচটায় এক-এক দলে পনেরো জন করে খেলতে পারে। যদিও একটা নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে এগারো জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না। আপাতত যা ঠিক, বারো জন করে দু’দলই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাবে। উদ্দেশ্য হল, যত পারো গুছিয়ে নিতে সাহায্য করছি। নিয়মের যথাসম্ভব ছাড় দিচ্ছি। এ বার সেই ছাড়ের সুযোগ নিয়ে ধোনি যদি চান, দিন্দাকে স্রেফ বল করিয়ে তাঁর বদলে নিয়মিত ব্যাটসম্যানকে ব্যাট করিয়ে যেতে পারেন।
ভারত-পাক ম্যাচের চিরাচরিত মেজাজের সঙ্গে কী অদ্ভুত কন্ট্র্যাডিকশন। বরাবর এর বৈশিষ্ট্য থেকেছে আইন মেনে জিঘাংসা। যেখানে একটা ইঞ্চি ছাড়া দূরে থাক, একে অপরকে সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে তৈরি। সেখানে ঢিলেঢালা নিয়মকানুন, ম্যাচে টিকিট না রাখাসব যেন কেমন ঝ্যালঝেলে করে রেখে দিয়েছে আবহটা।
এ দিন আবার সকাল সকাল এমন বৃষ্টি নামল যে ভাজ্জি-মনোজরা প্র্যাক্টিস যাবেন ঠিক করেও জিমমুখী হতে বাধ্য হলেন। শুনলাম কাল দুপুরে ফের যদি বৃষ্টি হয়, টি-টোয়েন্টির নিয়ম মেনে এগনো হবে। অপেক্ষা করা হবে এমন সময় অবধি যেখানে দু’দল অন্তত পাঁচ ওভার করে ব্যাট করতে পারে। |
এমনিতে ভারত-পাক লুডো খেললেও নামী টিভি চ্যানেলগুলো সেটা সম্প্রচারের জন্য টেন্ডার দেবে। আর পরিবেশে একটা গরম হাওয়া ঘুরঘুর করবে। এ বার তার চিহ্নমাত্র নেই। আইসিসি-র লোকেদের দেখে মনে হচ্ছে তিরিশ হাজারের প্রেমদাসা যদি ভরে, তাদের কাছে সেটা যুবরাজ সিংহের ক্যানসার থেকে ফিরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দাঁড়ানোর মতোই অত্যাশ্চর্য হবে!
পাকিস্তানি দূতাবাস সূত্রে বলা হল, হাজারখানেক পাকিস্তানি সমর্থক প্রেমদাসায় ব্যাকুল ভিড় করবেন এমনই তাঁদের কাছে খবর। যদি সত্যিও হয়, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকেরা কোথায়? আজ ভোররাতে জেট এয়ারওয়েজের যে বিমানে কলম্বো নামলাম, তাতে অর্ধেক সিট ফাঁকা। বেশ কিছু দিন নাকি কলম্বোয় ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা কমছে, যবে থেকে জয়ললিতার সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সরকারের মতবিরোধ শুরু হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন ভারত থেকে উৎসাহীরা ঠিকই আসবেন। আরও ক’দিন বাদে। যখন টুর্নামেন্টটা জমজমাট জায়গায় যাবে। এখনও তো শুরুই হয়নি। ভারত-পাকিস্তান প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই ফর্ম্যাটে আর কখনও মুখোমুখি হয়নি। তাই চার নম্বর সংস্করণে সংগঠকেরা এমন ব্যবস্থা রেখেছেন যে, গ্রুপ থেকে এরা, দ্বিতীয় বা প্রথম যে ভাবেই উঠুক, সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। ৩০ সেপ্টেম্বর সেই দিন, সব ঠিকঠাক চললে যে দিন কলম্বোতেই ফের টক্কর দুই দেশে।
তার আগে এই ম্যাচ আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল, আশানুরূপ টেম্পো না ওঠা টুর্নামেন্টের বাজারটাকে চড়চড়ে করে দেওয়া! ঠিক যেমন ২০০৯-এর ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হয়েছিল। সে বার ওভালে এমনই প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে গ্যালারির প্রতিটা সেন্টিমিটার ভরে যায়। এমন চিৎকার চেঁচামেচি জুড়েছিল গ্যালারি যে ব্রিটিশ দৈনিক লেখে, ‘কাল রাত্তিরে কেনিংটন এলাকার শিশুরা কেউ হোমটাস্ক শেষ করতে পারেনি।’ অথচ সেই ম্যাচের কোনও তাৎপর্যই পড়েনি টুর্নামেন্টে। রোহিত শর্মা ভারতকে ম্যাচটা জেতালেও সুপার এইটেই বিদায় আটকাতে পারেননি। আর আফ্রিদির পাকিস্তান? তারা শেষ করে লর্ডসে ট্রফি হাতে ধরে!
কিন্তু মনে হচ্ছে না ওভালের চড়চড়ে মেজাজটা প্রেমদাসায় তৈরি সম্ভব বলে! ইএসপিএন চ্যানেল মারকাটারি উদ্যোগে ম্যাচটা দেখাতে শশব্যস্ত। সৌরভ-সহ কমেন্ট্রির ফার্স্ট টিমকে তারা উড়িয়ে আনছে সোমবার দুপুরের আগেই। কিন্তু সেই গনগনে, রুক্ষ ভাবটা কি ডিজাইনও করাতে পারবে? স্বতঃস্ফূর্ত না এলে নকশা কি পারবে তৈরি করে দিতে?
এমনিতে আধুনিক, যুদ্ধোত্তর কলম্বোয় শান্তি ফিরেছে মুদ্রাস্ফীতি নামক ভয়ঙ্কর বাই-প্রোডাক্টকে সঙ্গে নিয়ে। যেখানে এক কিলো আলুর দাম এখন দেড়শো টাকা। বাজারের সাধারণ মোটরবাইক আড়াই লাখ টাকা। ন্যানো গাড়ি সাত লাখ টাকা।
কিন্তু ভারত-পাক ম্যাচের বাজার ভারত মহাসাগরের ওপরের আকাশের মতোই বৈশিষ্ট্যবিরোধী খিটকেল হয়ে রয়েছে। টুর্নামেন্টের হাইপ তোলা ব্যাপারটা কি তা হলে ‘পজ’ বাটন টেপার মতো হয়ে থাকল? ভারত-পাক সংঘাতও হার মেনে যাবে? নাকি নাটকীয় ভাবে ভুল প্রমাণ করবে সন্দেহবাদীদের?
সোমবারের কলম্বো ভারত-পাক ম্যাচে আকর্ষণীয় জবাবের পদপ্রান্তে! |