নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে শহিদ মাতঙ্গিনী, দেশের সেবায় নিয়োজিত রানি শিরোমণি কিংবা স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্বে মেদিনীপুরের অবদান অবিস্মরণীয়। সেই সব অতীত গৌরবের কথা-ছবি নিয়েই প্রদর্শনী কক্ষ চালু হল খড়্গপুর আইআইটিতে। স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত হিজলি শহিদ ভবন চত্বরে এই প্রদর্শনী কক্ষের উদ্বোধন করেন আইআইটি’র ডিরেক্টর দামোদর আচারিয়া। রবিবার বিকেলের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইআইটি’র ‘নেহরু মিউজিয়াম অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি সেন-সহ বিশিষ্টরা।এই বিভাগের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে প্রদর্শনী কক্ষটি। হেমচন্দ্র কানুনগো, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, ক্ষুদিরাম বসু সকলের কথায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলা, ইংরাজি ও হিন্দি এই ৩টি ভাষায়।
সব মিলিয়ে ১৫টি ফাইবার শিটে ১৫টি মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। শহিদ ভবন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্ণব হাজরা বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ভূমিকা কী ছিল, এখানে তাই তুলে ধরা হয়েছে। এটা একটা গ্যালারিই বলতে পারেন।” |
১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। হিজলি হত্যাকাণ্ডের সেই দিনে ইংরেজদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই বিপ্লবী। একজন সুভাষচন্দ্র বসুর সহপাঠী সন্তোষ মিত্র। অন্য জন, মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী তারকেশ্বর সেনগুপ্ত। সেই ঘটনার স্মৃতিতে প্রতি বছরের মতো এ দিনও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এখন যেখানে খড়্গপুর আইআইটি’র পুরনো ভবন, পরাধীন ভারতে সেখানেই ছিল হিজলি বন্দি নিবাস। অদূরেই প্রথম মহিলা জেল। ১৯৩১-এর ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে হিজলি বন্দি নিবাসে ‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় ইংরেজ পুলিশ। খবর পেয়ে সুভাষচন্দ্র ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত হিজলিতে আসেন। হিজলি ও চট্টগ্রাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩২ সালের গোড়ায় হিজলি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ লেখেন ‘প্রশ্ন’ কবিতাটি।
হিজলি শহিদ ভবনের পাশেই শহিদ চক। রবিবার বিকেলে এখানেই শহিদ দিবস পালিত হয়েছে। গত বছরও দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে এক প্রদর্শনী কক্ষ গড়ে তোলা হয়েছিল এখানে। সেখানে ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠা থেকে শুরু করে পলাশির যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে কী ভাবে ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হল, কী ভাবেই বা ব্রিটিশ ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হল এই দেশ, ক্রমে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে দেশ জুড়ে আন্দোলন সবই উঠে এসেছে। এ বার অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে গড়ে উঠল এক প্রদর্শনী কক্ষ।
|