সম্পাদকীয় ২...
অবশেষে...
ক্ষণে মনমোহন সিংহ নিশ্চয় বিজয়গর্বে গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক তিনি যে ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার’-এর কথা বলিয়া আসিতেছিলেন, তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় দফার সাঁঝবেলায় আসিয়া সত্যই তিনি সেই সংস্কারের পথে হাঁটিতে পারিলেন। তিনি যে সত্যই ‘সিংহ’, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর তাহা প্রমাণ করিল। ইহার পরেও অবশ্য প্রশ্ন থাকিয়া যায়। যে কাজগুলি বহু দিন পূর্বেই সম্পন্ন করা বিধেয় ছিল, দীর্ঘসূত্রতার বিশ্বরেকর্ড কায়েম করিবার পর শেষ পর্যন্ত সেই সংস্কারে হাত দেওয়া কি খুব কৃতিত্বের? এই সংস্কার কতখানি জরুরি, মনমোহন সিংহ স্বয়ং বহু বার বলিয়াছেন। ২০১২-র পরিবর্তে এই সিদ্ধান্তগুলি ২০০৪ বা ২০০৯ সালে করিলে ভারত অনেক বেশি সময় তাহার সুফল পাইত। আজ ভারতীয় অর্থনীতির যে নাভিশ্বাস উঠিতেছে, তাহা হয়তো রোধ করা যাইত। তবু, মানিতেই হইবে, তিনি সংস্কারের শেষ সুযোগটিকে অন্তত হাতছাড়া করেন নাই। তবে, তাঁহাকে ২০০৮ সালের মনমোহন সিংহের সহিত তুলনা করা চলে না। সেই প্রধানমন্ত্রী তাঁহার বিশ্বাসে অটল থাকিবার জন্য নিজের সরকারের অস্তিত্বকেই বাজি ধরিয়াছিলেন। এই প্রধানমন্ত্রী জানেন, তাঁহার ঘোষিত সংস্কারের সিদ্ধান্তে পথেঘাটে যতই প্রতিবাদ হউক, সরকার পড়িয়া যাওয়ার সম্ভাবনা যৎকিঞ্চিৎ।
রাজনীতিতে কাল কী হইবে, তাহা অনুমান করা অসম্ভব। কিন্তু, আজিকার আবহাওয়াকে যদি সূচক মানিতে হয়, তবে মনমোহন সিংহের মসনদ আপাতত সুরক্ষিত। তাঁহার কৃতিত্বে নহে, বিরোধীদের ব্যর্থতায়। বিজেপি-র ঘর সম্পূর্ণ অগোছাল। নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা লইয়া দলের অভ্যন্তরীণ অস্বস্তি কমিতেছে না। শরিকরাও এই প্রশ্নে ভাবিত। নীতীশ কুমারের মোদীতে অনীহা বহু দিনের। শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরেও সুষমা স্বরাজকে প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্যতম প্রার্থী ঘোষণা করিয়া বিজেপি-র এবং এন ডি এ-র সমীকরণ ঘাঁটিয়া দিয়াছেন। এই মুহূর্তে ইউ পি এ সরকার ফেলিয়া নূতন সরকার গঠন করার ক্ষমতা এন ডি এ-র নাই। বিজেপি-র ঘরোয়া সমস্যা বাহিরের সমর্থন আদায় করিবার পথেও বাধা। তৃতীয় ফ্রন্টও অসম্ভাব্যতার পরপারে। ২০০৮ সালের নাটকে যে প্রকাশ কারাট মুখ্য চরিত্র ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির পর এই দফার মঞ্চে তিনি কার্যত মৃত সৈনিকের ভূমিকায়। মুলায়ম সিংহ কার্যত জানাইয়া দিয়াছেন যে, এখনই তিনি ইউ পি এ-র বিরোধিতা করিবেন না। বাকি থাকিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শেষ পর্যন্ত কী করিবেন, সম্ভবত তিনিও জানেন না। তবে, তিনি সমর্থন প্রত্যাহার করিলেও সম্ভবত সরকার পড়িবে না। মনমোহন সিংহ বহু বিলম্বে যে সংস্কারের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন, অতঃপর তাহাতে অটল থাকাই তাঁহার কর্তব্য। বহুবিধ দাবি উঠিবে, বহু প্রকার চাপ তৈরি হইবে। কিন্তু নতিস্বীকার করিলে চলিবে না। যে সিদ্ধান্তগুলি হইয়াছে, তাহার প্রতিটিই ভারতের পক্ষে অপরিহার্য। ১৯৯১ সাল মনমোহন সিংহকে যে উচ্চাসনে বসায়, তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্ব সেই আসনের অধিকার খোয়াইতে বসিয়াছিল। ভাগ্য তাঁহাকে ফের সুযোগ দিয়াছে। দ্বিতীয় সুযোগ হারাইলে ইতিহাস ক্ষমা করে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.