সম্পাদক সমীপেষু...
তেঁনাদের হ্রস্বত্ব-দীর্ঘত্ব
আপনাদের পত্রিকায় দু-আড়াই মাস কাল ধরে ভূত-প্রসঙ্গ আসছে নানা ভাবে। নিত্য পাঠক তা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন। জুন-জুলাইয়ের হিসাব দিচ্ছি না, ৬ অগস্টের ‘কলকাতার কড়চা’য় আছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভূত-ভবিষ্যৎ’ গল্পের প্রেতের উক্তি আর সেই গলাতে ভর করে সন্দীপ রায়ের ভবিষ্যৎ ছায়াছবি ‘যেখানে ভূতের ভয়’-এর কথা।
বিপ্লব রায়চৌধুরীর হিন্দি ছবি ‘শোধ’-এর ভূতবিক্রেতার সেই হাঁক আবার শুনতে পেলাম ৩ সেপ্টেম্বরের কড়চায় (দক্ষিণ কলকাতার ‘মেনকা’ সিনেমা হলের সেই কবেকার মর্নিং শো-র কথা মনে পড়ল)।
নাগেরবাজার উড়ালপুলের ‘ভূত’-ও এসেছে প্রতিবেদনে (৫ সেপ্টেম্বর)। ঠাঁই বেঠাঁই ভূতেদের নিয়েই পড়েছি আমরা। বোঝা যাচ্ছে, তেঁনাদের আমরা আর নিজেদের মতো থাকতে দিতে নারাজ বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি চলছে।
এমনই এক ভূতগ্রস্ত লগ্নে আমাকে বেঁধা এক কাঁটার কথা বলতে চাই। পুরনো কাঁটা। দশ-পনেরো দিন বা মাসখানেক আগেই চিঠিটা পাঠাতে পারতাম, কিন্তু এক অস্পষ্ট কারণে তা হয়ে উঠছিল না। যিনি কাঁটাটা বিঁধিয়েছিলেন সেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মহাশয় হঠাৎই (আমার বোধে) চলে গেলেন সে দিন। ভেবেছিলাম চিঠি ছাপা হলে তিনিও হয়তো নতুন করে দু-কথা বলবেন। প্রিয় লেখকের প্রয়াণে আমি মর্মাহত আর তা শোনার আশা বৃথা।
কাঁটা বেঁধার উৎসে আছে পঁচিশ বছর আগের একটি লেখা, ‘ভূত-পেত্নীর যোটকবিচার’। সিরাজ লিখেছিলেন, ‘সানন্দা’ পত্রিকায়।
সেখানে বলা হয়েছে, আমরা ভূত বলতে যা বুঝি, বাংলা মুলুক ছাড়া সর্বত্র তার ভিন্ন নাম। আসমুদ্রহিমাচল তার একই নাম, প্রেত। এটি ‘শাস্ত্রসম্মত ও ঐতিহ্যসম্মত টার্ম’।
ভূতের ভবিষ্যৎ ছবির একটি দৃশ্য।
সংস্কৃত ভূতের শব্দমহিমা একেবারেই ভিন্ন। উপনিষদের যুগেও যে ভূতের সন্ধান পাওয়া যায়, সে আমাদের বাংলা ভূত নয়।
উপনিষদের ভূত হল: ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম এই পঞ্চভূত। দক্ষযজ্ঞ এপিসোড এবং মহাকালী এপিসোডে যে সব স্ত্রী-পুরুষ অপদেবতার দেখা মেলে, তারা নানা গৌণ সম্প্রদায়ের অপদেবতা। ভূতনাথ শিবের সাঙ্গোপাঙ্গরা বাংলা ভূত নয়। এ ‘ভূত’ শব্দটি অর্বাচীন প্রয়োগ, মুসলমানরা এ দেশে আসার পর ঐতিহ্যসম্মত ‘প্রেত’-কে কোণঠাসা করে জায়গা করে নিয়েছে যেমন, ‘ভূতপ্রেত’।
সিরাজ বলেছেন, তাঁর দৃঢ় ধারণা “এই বাংলা ভূত আসলে আরবি শব্দ ‘বুত’। আরবিতে শব্দটির আক্ষরিক প্রাচীন অর্থ ‘পুতুল’। কিন্তু শব্দার্থ পরিবর্তনে ‘প্রকৃতির অমঙ্গলধারী শক্তিগুলি’-কে বোঝায়।
প্রাক্ ইসলামি ট্রাইবাল আরব সমাজে এই অপদেবতাগুলিকে তুষ্ট করা হত, সর্বত্র আদিম ট্রাইবাল সমাজে তা-ই হয়। এগুলি ‘বুত’। পরে ইসলামি যুগে শব্দটি নিন্দার্থে প্রযুক্ত হতে থাকে। ...বুজুর্গ, ফাজিল এ সব গৌরবার্থক শব্দ বাংলায় নিন্দার্থে প্রযুক্ত। ...একই নিয়মে আরবি ‘বুত’ সংস্কৃত ‘প্রেত’-এর পাশে এসে বেচারি প্রেতকে প্রায় ঠাইনডা করে ফেলেছে।”
সিরাজকে মানলে ভূতের পাদুকা বদলাতে হবে হস্যু পরাতে হবে। সুনীতিকুমারও ODBL Vol One-এ ‘Infiltration of Persian Words’-এর কথা বলতে গিয়ে দেখিয়েছেন, “বোৎ, বুৎ, bot, but, Indianised to ভূত bhut, idol (=but)...”
সিরাজের ‘দৃঢ় ধারণা’-র প্রতি কিঞ্চিৎ দুর্বলতাবশে এ নিয়ে প্রাজ্ঞজনের দ্বারস্থ হলাম। জানতে চাই দুটো কথা এক, তেঁনারা হস্যু না দিঘ্যু,। দুই, বাংলা ভূতের (তথাকথিত) বয়স কত?
দৃষ্টিকটু এবং অস্বস্তিদায়ক
নিউ বারাকপুর রেল স্টেশনে ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মহিলা যাত্রীদের জন্য মাথার উপর ছাউনি দিয়ে সুন্দর বসার জায়গা করা হয়েছে। কিন্তু তার কয়েক পা দূরেই করা হয়েছে পুরুষ যাত্রীদের শৌচাগার।
ব্যাপারটা মহিলা যাত্রীদের পক্ষে দৃষ্টিকটু এবং অস্বস্তিদায়ক। তা ছাড়া প্রস্রাবের দুর্গন্ধে ওখানে মহিলাদের পক্ষে ট্রেনের জন্য বসে থাকাও কষ্টকর।
ভেন্ডার বেদখল
আমি এক জন ভেন্ডার। প্রতি দিন রাতে মালপত্র নিয়ে ভেন্ডার কামরায় ফিরি। শিয়ালদায় ৭-৫০-এর দত্তপকুর লোকাল, বা অন্য গাড়ির প্ল্যাটফর্ম নম্বর ঘোষণা হতেই অফিসফেরত বাবুরা ভেন্ডার কামরায় চড়ে রুমাল ইত্যাদি রেখে বসে পড়েন। আমাদের মালপত্র নিয়ে উঠতে দেরি হয়। শেষে আমাদের জায়গা হয় কামরার মেঝেতে। দেরি হলে বাঙ্কারে মাল রাখার জায়গাও পাওয়া যায় না।
এত কামরা থাকতে বাবুরা অপরিষ্কার ভেন্ডার কামরায় ওঠেন কেন? কারণ, জমিয়ে তাস খেলা যায়। ওই তাসখেলার জায়গাটিকে বাবুরা বলেন, ‘মাঠ’। ওই মাঠে দাঁড়িয়ে-বসে ধূমপান ইত্যাদি করা যায়। বিধাননগর-দমদম থেকে ভেন্ডাররা মালপত্র নিয়ে ট্রেনের পর ট্রেন ছাড়তে থাকেন। ভেন্ডার কামরায় চড়তে পারেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.