বহু আবেদন-নিবেদনের পরেও স্টিলওয়েল রোড খুলছে না। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মৃতিতে অরুণাচল প্রদেশের চাংলাং জেলায়, স্টিলওয়েল রোডের পাশেই গড়া হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরও একটি স্মৃতিসৌধ। সেই সঙ্গে স্টিলওয়েলের অংশ ‘হেল গেট’ ও ‘আয়রন ব্রিজ’-এর কাঠামো সংরক্ষণ এবং পাংসু গিরিপথ অবধি স্টিলওয়েল রোড মেরামতের কাজ শুরু করছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে সংযুক্ত বাহিনীর সৈন্যরা জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ভারত থেকে মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ১৯৪৩ সালের শেষদিকে অসমের লিডো থেকে অরুণাচল, মায়ানমার হয়ে চিনের ইউনান অবধি পাহাড়, জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি শুরু হয়। লিডো থেকে অরুণাচলের পাংসু গিরিপথ হয়ে মায়ানমারের হুকাং উপত্যকা। তারপর চিনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং অবধি গেল রাস্তা। মার্কিন সেনা, ভারতীয়, আফ্রিকান ও চিনা শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দু’হাজার প্রাণের বিনিময়ে ১৭০০ কিলোমিটার রাস্তা এক বছরে তৈরি করে ফেললেন মেজর যোশেফ স্টিলওয়েল। দুই থেকে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা রাস্তার পাশে পাশে তেল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বসানো হল পাইপলাইনও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে রাস্তার প্রয়োজন ফুরলো।
১৯৬২ সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকেই স্টিলওয়েল রোড বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। বর্তমানে জঙ্গলে ঢাকা এই রাস্তার অনেকটা অংশের অবস্থা কেমন, তা কেউই সঠিক জানে না। বারবার অসম ও অরুণাচলের তরফে স্টিলওয়েল রোড খোলার আবেদন করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এই রাস্তা খোলার পক্ষপাতী নয়। রাস্তার অনেকটা অংশই গিয়েছে জঙ্গি অধ্যূষিত মায়ানমারের ভিতর দিয়ে। অসম ও অরুণাচলের মধ্যে পড়ছে স্টিলওয়েলের ৬০ কিলোমিটার রাস্তা। তার কিছুটা এখন ১৫৩ নম্বর জাতীয় সড়কের অংশ। চিনের মধ্যে থাকা ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা এখন টি-হর্স রোডের সঙ্গে যুক্ত। কুনমিং অবধি এখন ছয় লেনের হাইওয়ে।
ভারতের দিক থেকে ঐতিহাসিক স্টিলওয়েল রোড ফের খোলা না হলেও, ব্রিটিশ তথা মিত্রবাহিনীর হয়ে লড়তে গিয়েছিলেন যে সব ভারতীয় তাঁদের স্মৃতিতে স্টিলওয়েল রোডের পাশেই স্মৃতিসৌধ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতিমন্ত্রকের সবুজ সংকেত মিলেছে। সৌধ তৈরির জন্য মঞ্জুর হয়েছে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। অরুণাচল প্রদেশের গবেষণা বিভাগের অধিকর্তা, টাগে টাডা জানান, বরাদ্দ অর্থও রাজ্যের হাতে পৌঁছেছে। এখন স্থান নির্বাচনের কাজ চলছে। প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সৌধের নক্শা তৈরি করছে। সেখানে বিশ্বযুদ্ধের নানা স্মৃতি-সামগ্রী, ছবি, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্র ও নিহত সেনাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখা হবে।
টাডা আরও জানান, ‘হেল গেট’ ও ‘আয়রন ব্রিজ’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জীবন্ত দলিল। সেই দু’টিও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এরই পাশাপাশি, অরুণাচল প্রদেশ সরকারের তরফে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)-কে অনুরোধ করা হয়েছে, ভারতের মধ্যে, অসমের লিডো থেকে অরুণাচল-মায়ানমার সীমান্তে, পাংসু গিরিপথ অবধি স্টিলওয়েল রোড মেরামত করে তা ভারতীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। প্রাকৃতিক পরিবেশ, দুর্গম এলাকা এবং ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস সব মিলিয়ে তা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই রাস্তা মেরামত করে গাড়ি চলার যোগ্য করা হোক। তাতে ওই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও উপকৃত হবেন। |