প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরির রাজনৈতিক আঁতুড়ঘরে ‘বাজিমাত’ করলেন সিপিএমের ‘বিদ্রোহী’ ছাত্র নেতারাই।
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোয় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের দল থেকে বের করে দিয়েছিল সিপিএম। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কিন্তু তাঁরাই সভাপতির পদ ছিনিয়ে নিলেন। সিপিআইএমএল-এর ছাত্র সংগঠন আইসা-র প্রার্থীকে হারিয়ে এসএফআই থেকে বহিষ্কৃত ভি লেনিন কুমার ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্যত মুছে গিয়েছে এসএফআই। কোনও পদ জেতা তো দূরের কথা, সভাপতি পদে এসএফআই-প্রার্থী ১১ জনের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতা জিকো দাশগুপ্ত সরাসরি বলছেন, “এর পরে সিপিএম নেতৃত্বের নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। সাধারণ মানুষ যে তাঁদের সুবিধাবাদী রাজনীতিকে সমর্থন করছেন না, সেটা তাঁদের বোঝা উচিত। ছাত্ররা সেই বার্তাই দিয়েছেন।”
গত নির্বাচনে এসএফআই মাত্র দু’টি আসনে জিতেছিল। বিক্ষুব্ধরা এ বার সভাপতির পদ ছাড়াও অন্য পাঁচটি আসনে জিতে এসেছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতারা নির্বাচনের প্রচারে স্পষ্ট বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রশ্নে অন্য অবস্থান নিতে গিয়ে রেজ্জাক মোল্লাকে দলের কোপে পড়তে হয়েছে। কেরলে টি পি চন্দ্রশেখরন হত্যাকাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাতে গিয়ে ভি এস অচ্যুতানন্দনকে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। একই ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণবকে সমর্থনের প্রশ্নে নীতিগত অবস্থান নিতে গিয়েই তাঁদের দলীয় শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। ঠিক এইখানেই বহিষ্কৃতরা ছাত্রছাত্রীদের সহানুভূতি কুড়িয়েছেন বলে সিপিএম সূত্র থেকেও এখন স্বীকার করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করার পরে এসএফআই-এর নিজস্ব সংগঠনও ভেঙে পড়েছিল জেএনইউ-তে। প্রার্থীই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষবেলায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কোপাল সিংহকে জেএনইউ-তে ভর্তি করিয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী করা হয়। সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ-ও বিক্ষুব্ধদের সঙ্গেই জোট বাঁধে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতারা এসএফআই-জেএনইউ নাম নিয়ে নির্বাচনে লড়েন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছিলেন, সেখানে ছাত্র সংগঠনের এমন ফল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় পড়েছে দলীয় নেতৃত্ব।
সিপিএমের তরফে প্রকাশ্যে অবশ্য অন্য কথা বলা হচ্ছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, সভাপতি পদে জেতা সত্ত্বেও বিক্ষুব্ধরা ছাত্র সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেন না কেন? ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদক পদে আইসা-র প্রার্থীই জিতেছে। ছাত্র সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনও আইসা-র দখলে। এ ব্যাপারে এসএফআই-এর একটি ব্যাখ্যাও আছে। এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আইসা-র সঙ্গে এসএফআই-জেএনইউ-এর গট আপের জেরেই এমন হয়েছে। বাম-বিরোধী শক্তিগুলি একজোট হয়ে এসএফআই-এর বিরুদ্ধে লড়েছে।” |