শরণার্থী শিবির থেকে ঠিক কত জন নিখোঁজ, তা নিয়েই আপাতত জল্পনা চরমে। কোথায় গেলেন তাঁরা? নিখোঁজ মাত্রই কী অনুপ্রবেশকারী? এমন সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে
নামনি অসমে।
আবসুর বক্তব্য, শিবির থেকে পালিয়ে অসমের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছে এই অনুপ্রবেশকারীরা। পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য, অনুপ্রবেশকারী নয়, অনেক দরিদ্র মানুষও বিনামূল্যে খাবারের লোভে ত্রাণ শিবিরগুলিতে ঠাঁই নিয়েছিলেন। জরিপ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই তাঁরা পালিয়ে যাওয়ায় নিখোঁজ-সমস্যার সূচনা। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জি ডি ত্রিপাঠী মনে করছেন, ত্রাণ শিবিরে মানুষ কমা তো ইতিবাচক পরিবর্তন। তা নিয়ে খামোকা রাজনীতি করা অর্থহীন। দিন তিনেক আগে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, শিবিরবাসীদের নাগরিকত্ব ও জমির পাট্টা যাচাইয়ের ফর্ম বিলি হওয়ার পরেই ধুবুরির নানা শিবির থেকে বহু শরণার্থী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ বা নিজস্ব জমির পাট্টা না থাকায় ভয় পেয়েই অনেকে শিবির ছেড়ে পালিয়েছেন। বড়ো নেতাদের দাবি, এই ঘটনা প্রমাণ করে, অনুপ্রবেশকারীরা সত্যি সত্যিই শিবিরগুলিতে ছিলেন।
প্রথম পর্যায়ে জমি ও নাগরিকত্বের ফর্ম বিলি শুরু হতেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ শিবির থেকে চলে যান। এ পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে শিবির-ছাড়া মানুষদের একাংশ কোচবিহার, একাংশ ফালাকাটা ও বাকিরা গোয়ালপাড়া বা বরপেটার দিকে গিয়েছেন। ২৬ হাজার ৪৩১টি ফর্ম থেকে জমির পাট্টা ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের পরে প্রায় ১২ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২০৬টি শিবিরে আছেন প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার শরণার্থী। পরবর্তী পর্যায়ের প্রমাণপত্র যাচাই চলছে। আবসু নেতা প্রমোদ বড়োর দাবি, “সরকার জানিয়েছিল শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন চার লক্ষ মানুষ। এআইইউডিএফের হিসেব ছিল, ছ’লক্ষ। তখনই ২ লক্ষ অতিরিক্ত মানুষের গরমিল নিয়ে আমরা সরব হয়েছিলাম। নাগরিকত্ব ও জমির দলিল জরিপের কাজ শুরু হতেই দলে দলে মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় প্রমাণ হল, শিবিরে প্রকৃত শরণার্থীর সংখ্যা মোটেই অত বেশি ছিল না।” তাঁদের দাবি, শিবিরে নাগরিকত্ব যাচাই বাধ্যতামূলক হোক। ৭১ সালের ভোটার তালিকায় নাম ও জমির দলিল না থাকলে কাউকে অসমের মাটিতে পুনর্বাসন দেওয়া যাবে না বলে বড়ো নেতার দাবি।
ধুবুরির অতিরিক্ত জেলাশাসক এ এম লস্কর বলেন, “২৩ জুলাই ১৩৯টি শিবিরে ১,৭৩,০০০ মানুষ ছিল। এক মাস পরে সংখ্যাটি কমে হয় ১,৪৭,০০০। এখন ১২৯টি শিবিরে প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার শরণার্থী রয়েছেন। বাকিরা কোথায় গেলেন তা নিয়ে আমাদের হাতে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। অনেকেই কোকরাঝাড় বা চিরাং-এ ফিরে গিয়েছেন। অনেকের নাম একাধিক শিবিরে অন্তর্ভুক্ত ছিল। হিসেবে গোলমাল হয়ে থাকতে পারে।” প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, জমির দলিল বা নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই এমন অনেক দরিদ্র, স্থানীয় মানুষও শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়েই তাঁরা পালিয়ে গিয়েছেন। জেলা পুলিশ জানাচ্ছে, শিবিরবাসীদের, কে, কোথায় যাচ্ছেন তার খবর রাখা কার্যত অসম্ভব। তবে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে ধুবুরির শিবিরে ঢোকা ও বেরোনোর সময় খাতায় নাম, সময়, গন্তব্য লেখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জি ডি ত্রিপাঠীর মতে, শিবিরে জনসংখ্যা কমার অর্থ হল পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সম্ভবত শিবিরগুলিতে দরিদ্র, স্থানীয় মানুষও ভিড় করেছিলেন। অনেকে আশঙ্কায় নাম লেখায়। কিন্তু এখন তাঁরা শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁদের ‘নিখোঁজ’ হিসাবে দেখানোটা ঠিক নয়। এর সঙ্গে অনুপ্রবেশ সমস্যা জড়িয়ে দেওয়াটাও অনুচিত।” |