শুরু হল এক স্বপ্নের উড়ান। বিশ্বকর্মা পুজোর আমেজে কলকাতার আকাশ দখল করল ছক-ভাঙা ভাবনার স্বপ্ন-ঘুড়ি। রবিবার, শহরের পাড়ায় পাড়ায় ঘুড়ি-যোদ্ধাদের রোমাঞ্চের শরিক হল নতুন একটি বাংলা সংবাদপত্র।
একটা সময় ছিল যখন বিশ্বকর্মা পুজোর কাছে-পিঠে কড়কড়ে মাঞ্জার গন্ধে হাত নিশপিশ করত পাড়ার ছেলে-বুড়োদের। লাটাই হাতে বীরবিক্রমে প্যাঁচ-পয়জারের শৌর্য মুগ্ধ চোখে গিলত পাড়ার মেয়েরা। একটু লাটাই ধরা বা ঘুড়ির ধরতাইয়ে হাত লাগিয়েও জীবন ধন্য হত অনেকেরই। কম্পিউটারে নানা কিসিমের ভার্চুয়াল গেম্স, ফেসবুক-টুইটারের যুগে ঘুড়ির সেই মহিমা কিছুটা ফিকে হয়ে গিয়েছিল। এবিপি গ্রুপের নতুন খবরের কাগজ ‘এবেলা’ এসেই শহরের ঘুড়িপাগলদের স্বপ্নে টান দিল।
|
ঘুড়ি মানে কিন্তু নিছকই ঘড়ির কাঁটা পিছনে ফেরানো অতীতচারিতা নয়। ঘুড়ির মধ্যে একটা অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্নও তো আছে! লাটাইয়ের সুতো আর কাগজের ঘুড়ির আকাশজয়ের স্পর্ধাও সে-রকম। সেটা বোঝালেন বাংলা গানের এখনকার দুই দিকপাল রূপঙ্কর আর অনুপম। বেহালার ছেলে অনুপম এখনও সুযোগ পেলেই ঘুড়ি ওড়ান। “এই তো দিন দশেক আগেও বাড়ির ছাদে দিব্যি ওড়ালাম। ‘এবেলা’র জন্য ঘুড়ি ওড়াতে পেরে দারুণ লাগছে।” বলছিলেন তিনি। রূপঙ্কর অবশ্য সখেদে কবুল করেছেন, “অসম্ভব খারাপ ঘুড়ি ওড়াই আমি।” কিন্তু ঘুড়ি ও ভোকাট্টার রূপকধর্মিতা যে রূপঙ্করের কল্পনাকে বহু দিন ধরেই টান দিয়ে আসছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
‘ভোকাট্টা সুখী-সুখী বাঁচা
ভোকাট্টা বাঁচার কামনায়।’
কলকাতার ঘুড়ি-কার্নিভালের হাত ধরে ‘এবেলা’র উড়ানের মূল সুরটা রূপঙ্করের হিট গানই বেঁধে দিল।
লাল-সাদা, হলুদ-লাল ঘুড়ির গায়েও গোটা-গোটা অক্ষরে লেখা ‘এবেলা’। বিজয়গড়ের শ্রী কলোনিতে বারো ভূতের মেলার মাঠে দুই শিল্পীর অন্য রকম যুগলবন্দি দেখল কলকাতা। অনুপমের টিপ্স নিয়েই সাবধানে ঘুড়ি-হাতে ধরতাই দিলেন রূপঙ্কর। নিপুণ হাতে সুতো ছেড়ে ঘুড়ি আকাশে ভাসিয়ে রাখলেন অনুপম। তুমুল হাততালি। ‘ভোকাট্টা’-খ্যাত রূপঙ্করও লাটাই হাতে গোঁত্তা খাওয়া ঘুড়িকে টাঙ্কি মারার প্রাণপণ চেষ্টা চালালেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা আবালবৃদ্ধবণিতার চোখেমুখে তখন উত্তেজনার ঘোর। ঘুড়ি-যুদ্ধের আঁচ ছড়িয়ে পড়ল টালা আরণ্যক, বাগবাজারে নিবেদিতা উদ্যান, বিবেকনগর কালীবাড়ি, চেতলা স্পোর্টস লাভার অ্যাসোসিয়েশন ও সল্টলেক কে বি ব্লকের মাঠেও। |
ঘুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি। রবিবার, বাগবাজারের ভগিনী নিবেদিতা উদ্যানে। ছবি: সুমন বল্লভ |
ঘুড়ির অনুষঙ্গেই পরপর দৃশ্যের জন্ম। সপ্তাহান্তের বাগবাজারে মাছের ব্যাগ হাতে থমকে দাঁড়ানো জল্পনায় নতুন বাংলা খবরের কাগজের প্রসঙ্গ। বেলগাছিয়া বাজারের ভিড় ঠেলে সাইকেল আরোহীদের হাতে এবেলা’ লেখা ঘুড়ি। বিজয়গড়ে পেটাই পরোটা দিয়ে জমিয়ে প্রাতরাশ সারার ফাঁকেও নতুন খবরের কাগজের নতুন ভাবনা নিয়ে আড্ডা। যা বুঝিয়ে দিল, একবেলার তাৎক্ষণিকতা নয়, শহরের প্রাত্যহিকতার অঙ্গ হয়েই আসছে নতুন বাংলা কাগজ ‘এবেলা’। |