মহানগরীর দক্ষিণ অংশ ভেসে গিয়েছিল শনিবারের বৃষ্টিতে। রবিবার ভাসল উত্তর কলকাতা। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ দিন উত্তরে প্রায় ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে উত্তর ও দক্ষিণের লড়াইয়ে দু’দিনই বৃষ্টি পেয়েছে মধ্য কলকাতা। যার ফলে এ দিনও রেসকোর্স থেকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার উড়তেই পারল না।
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের একটি ঘূর্ণাবর্ত এবং দক্ষিণবঙ্গের উপরে অবস্থিত মৌসুমি অক্ষরেখার জন্যই এই বৃষ্টি। কিন্তু শনিবার দক্ষিণে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেও উত্তরে তেমন হয়নি। এ দিন আবার উত্তর ভাসলেও দক্ষিণের ছবিটা আলাদা। এমন হচ্ছে কেন? আবহবিদেরা বলছেন, এই সময়ে বৃষ্টি হয় মূলত স্থানীয় ভাবে। অর্থাৎ যেখানে মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়, সেখানেই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। আর এই মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়াটা নির্ভর করে মৌসুমি অক্ষরেখার উপরে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আবহবিদ বলেন, “শনিবার মৌসুমি অক্ষরেখাটি দক্ষিণ দিকে ঘেঁষে ছিল। এ দিন তা কিছুটা সরে গিয়েছিল উত্তরে।”
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্তের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করছে। তার ফলে সেটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি রয়েই গিয়েছে। তার উপরে ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্ত জোরালো হয়ে ওঠায় আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আজ, সোমবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। |
খারাপ আবহাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার উড়তে পারছিল না। শনিবার তাই খড়্গপুরে দু’ঘণ্টা আটকে ছিলেন রাষ্ট্রপতি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরে হেলিকপ্টারে কলকাতায় ফেরেন তিনি। কিন্তু রবিবার হেলিকপ্টার একেবারেই উড়তে পারল না। তাই প্রণববাবু ফুলেশ্বর গেলেন সড়কপথে। আজ, সোমবারেও আবহাওয়ার এই অবস্থা চললে তাঁকে রাজভবন থেকে হেলিকপ্টারের পরিবর্তে সড়কপথেই বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। রবিবার বেলা পৌনে ৩টেয় ময়দান থেকে হেলিকপ্টারে ফুলেশ্বর যাওয়ার কথা ছিল প্রণববাবুর। তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরকেও। কিন্তু দুপুর থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সিদ্ধান্ত বদলে ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে রাষ্ট্রপতির কনভয় রওনা হয় ২টো ৩৭ মিনিটে। হেলিকপ্টারে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। সড়কপথে যাওয়ার ফলে প্রায় ৫০ মিনিট সময় নিল রাষ্ট্রপতির কনভয়।
সেনা সূত্রের খবর, যে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ভিআইপি-কে নিয়ে যাতায়াত করে, সেটি সাধারণত মাটি থেকে আড়াই হাজার ফুট উপর দিয়ে ওড়ে। তার থেকে কম উচ্চতা দিয়েও ওড়া সম্ভব। কিন্তু কপ্টারের পাইলট যদি খারাপ আবহাওয়ার জন্য উপর থেকে মাটি দেখতে না-পান, তা হলে ঝুঁকি থেকে যায়। এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা তিন হাজার মিটারের কাছাকাছি ছিল। আর আলিপুর এলাকায় সেটা ছিল চার হাজার মিটার। এই অবস্থায় অনায়াসে কপ্টার উড়ে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতিকে যে কপ্টারে নিয়ে যাওয়া হল না, তার মূলে আছে স্থানীয় ভাবে বজ্রপাত আর বৃষ্টি। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ছোট ছোট এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ছিল বজ্রপাত। কপ্টারের ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল মূলত বজ্রপাত নিয়েই। এ দিন সকাল থেকে কয়েক দফায় বৃষ্টি নামে মহানগরীতে। জোর বৃষ্টি হয়েছে হাওড়াতেও। বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টির কারণে রাষ্ট্রপতিকে কপ্টারে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি সেনাবাহিনী।
সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টির ফলে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যায়। আমহার্স্ট স্ট্রিট, গিরিশ পার্ক, কলেজ স্ট্রিটের একাংশে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে ছিল। তবে রাতের দিকে তা অনেকটাই নেমে যায়। দিনভর জল জমে থাকলেও ছুটির দিনে রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকায় যানজটের সমস্যা তেমন হয়নি। নারকেলডাঙা মেন রোডে একটি বাড়ির বারান্দা ভেঙে আহত হন এক জন। |