দামোদরের পাড় থেকে দেদার কাটা হচ্ছে বালি। লরিতে চাপিয়ে পাচার হচ্ছে রাজ্য তথা দেশের নানা এলাকায়। আসানসোল মহকুমা এলাকায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ভাবে বালি চুরি ও পাচারের ব্যবসা। ফলে, ফাঁকি পড়ছে রাজ্য সরকারের বহু টাকা রাজস্ব। এই বালি চুরি রুখতে সম্প্রতি আসানসোলে পুলিশ-প্রশাসনের একটি বৈঠকও হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শীঘ্রই এ ব্যাপারে অভিযানে নামা হবে।
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, মহকুমায় দামোদরের পাড়ে বেআইনি বালি ব্যবসা দীর্ঘদিনের। তবে আগে অবৈধ কয়লা খনন ও পাচারের রমরমার কারণে বালির কারবার এত ফুলে-ফেঁপে ওঠেনি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠনের পরে গত বছরখানেকে কিছুটা হলেও কয়লা কারবারে রাশ টানা গিয়েছে। আর তারই জেরে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচারের ব্যবসা বাড়ছে। পুলিশের একাংশের মতে, এখন প্রকাশ্যে লরি বোঝাই কয়লা বা লোহা জাতীয় সড়ক দিয়ে যেতে দেখলে চোখে পড়ে, ধরপাকড় হয়। কিন্তু লরিতে বালি নিয়ে যেতে দেখলে এখনও ততটা কড়াকড়ি হয় না। আর সেই সুযোগ নিয়েই বাড়ছে এই কারবার। |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর পাড় থেকে বালি তোলার জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে বালিঘাটের লিজ নিতে হয়। কিন্তু মহকুমার একশ্রেণির মাফিয়া সে সবের বালাই না করে ইচ্ছে মতো দামোদরের বালি তুলে পাচার করছে। বরাকরের মনবেড়িয়া, কুলটির ডিসেরগড়, বার্নপুরের কালাঝরিয়া, সামডিহি গ্রাম ও নেহরু পার্ক লাগোয়া এলাকা, রানিগঞ্জের তিরাট, দামালিয়া ইত্যাদি এলাকায় দামোদর থেকে অবৈধ ভাবে লক্ষ লক্ষ টন বালি তুলছে মাফিয়ারা।
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কিছু অসাধু কর্মীর মদতেই দিনের পর দিন এই অপকর্ম চালানো সম্ভব হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। ফলে, এক দিকে যেমন সরকারের বহু টাকা রাজস্ব ফাঁকি যাচ্ছে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নদের তীরবর্তী এলাকার চাষি পরিবারগুলির দাবি, রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে এই মাফিয়ারা প্রচুর বালি তুলে চাষযোগ্য জমির আশপাশে জমা করে। বর্ষার জল বা হাওয়ায় সেই বালি জমিতে এসে পড়ছে। ফলে, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের নানা সময়ে লরি বোঝাই করে বালি পাচার হচ্ছে। প্রাণের ভয়ে প্রতিবাদের রাস্তায় যেতে পারেন না তাঁরা।
দিন কয়েক আগে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই বেআইনি বালি চুরির প্রসঙ্গ ওঠে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ সে দিন বলেন, “এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই। তবে শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এর কয়েক দিন পরেই পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসন একটি বৈঠকে বসে। আসানসোলে এই বৈঠকে ছিলেন আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্ত আইকত, এডিসিপি (সদর) সুরেশ কুমার-সহ প্রশাসনের বেশ কিছু কর্তা। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত জেলাশাসকের আশ্বাস, “বালি পাচারের ব্যবসা বন্ধ করতে প্রশাসন অভিযানে নামতে চলেছে।”
দেরিতে হলেও প্রশাসনের টনক নড়ায় খুশি বাসিন্দারা। কবে অভিযান শুরু হবে, তা কতটাই বা সফল হবে, সে দিকেই এখন নজর শিল্পাঞ্চলবাসীর। |