বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে জলে ডুবে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম ধ্রুবজ্যোতি দাস (১৪) জেনকিন্স স্কুলের পড়ুয়া। বাড়ি কোচবিহার কোতোয়ালির ডাউয়াগুড়ি এলাকায়। সোমবার স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশনের পরে ওই ছাত্রটি দুই নম্বর কালীঘাট রোড এলাকার একজন বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখানে তার আরও অন্য দুই সহপাঠীও যায়। চার জনে একসঙ্গে এলাকার একটি পুকুরেও যায়। ওই পুকুর থেকেই ধ্রুবজ্যোতিকে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। রাতে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ধ্রুবজ্যোতির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার ময়না তদন্তের পরে ওই ছাত্রের দেহ ডাউয়াগুড়ির বাড়িতে যায়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া নামে। মৃতের পরিবারের লোকদের সমবেদনা জানাতে ওই বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এটি নিছক দুর্ঘটনা না অন্য কিছু তা নিয়েও বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছে। নার্সিংহোম থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটি নিয়ে অবশ্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। তবে এদিন বিকেল পর্যন্ত পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে এলাকার বাসিন্দা থেকে মৃতের পরিজন, এমনকি এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সকলেই মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি তুলেছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে। তা ছাড়া ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হবে। ওই রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ডাউয়াগুড়ির বাসিন্দা দিলীপ দাস ও তাঁর স্ত্রী রেখা দেবীর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ধ্রুব বড়। ছোটবোন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। সোমবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ দুই ভাইবোন একসঙ্গে স্কুলের জন্য বাড়ি থেকে বেরোয়। মনীষা বাড়ি ফিরলেও ধ্রুবজ্যোতি না ফেরায় পরিবারের লোকজন চিন্তায় পড়েন। তার মধ্যেই বিকেলে ফোন পান, পুকুরে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছেলে। তড়িঘড়ি সকলেই নার্সিংহোমে যান। দিলীপ বাবুর ভাই পঙ্কজ দাস বলেন, “পিঠে মারধরের দাগ রয়েছে। ওকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত। পরিস্থিতি একটু সামলে নিয়ে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হবে।” পঙ্কজবাবুর বন্ধু এলাকার বাসিন্দা স্বপন সরকারও বলেন, “ছেলেটির পিঠে মারধরের চিহ্ন মিলেছে। দাহ করার সময় সব ছবি করা হয়েছে। দ্রুত পুলিশে লিখিত অভিযোগ করা হবে।” ডাউয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সোলেমন মিঁয়া বলেন, “পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনুমান ওকে খুন করা হয়েছে।” কালীঘাট রোডে যে বন্ধুর বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে তার বাবা তপন ভাওয়াল বলেন, “চার জন পুকুরে গেলেও ধ্রুব জলে নামেনি। পাড়ে বসছিল। আমার ছেলে সহ অন্যরা জলে খেলায় ব্যস্ত ছিল। আচমকা ধ্রুব পাড়ে নেই দেখে খোঁজ শুরু হয়। পরে বুদবুদ দেখে এলাকার এক বাসিন্দা ছেলেটিকে উলঙ্গ অবস্থায় জল থেকে উদ্ধার করে। এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।”
|