নিজের শিশুকন্যাকে ‘কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান’ বলে রেলপুলিশের হাতে তুলে দিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন এক মহিলা। ওই মহিলার স্বামী রাজকুমার হাজরার দাবি অন্তত সে রকমই।
রবিবার দুপুরে ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে পুরুলিয়ার আদ্রায় রেলপুলিশের দফতরে হাজির হয়েছিলেন সেই মহিলা। বলেছিলেন, গড়ধ্রুবেশ্বরে একটি ট্রেনের মধ্যে তিনি ওই শিশুটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। রেলপুলিশ তখন ওই শিশুটির দায়িত্ব নেয়। সোমবার সংবাদপত্রে আদ্রার রেলপুলিশের দফতরে ওই মহিলার সঙ্গে শিশুটির একটি ছবি প্রকাশিত হলে তা নজরে পড়ে আনাড়ার বাজকাট্যাড়ের বাসিন্দা রাজকুমার হাজরার। তিনি সোমবারই ওই রেলপুলিশ দপতরে যোগাযোগ করেন। তবে রেলপুলিশ তত ক্ষণে ওই শিশুটিকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাঁকুড়া জেলার ছাতনার একটি হোমে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে রাজকুমার সমস্ত নথি দেখানোর পরে শিশুটিকে নিজের কোলে ফিরে পেয়েছেন। ওই সমিতির চেয়ারম্যান অমিতা মিশ্র বলেন, “রাজকুমারবাবুর কাছে জেনেছি, তাঁর স্ত্রী পরিচয় গোপন করে নিজের মেয়েকে হোমে পাঠিয়েছিলেন। শুনে অবাক হয়েছি।” এসআরপি (খড়গপুর) দেবাশিস বড়ালও বলেছেন, “মা নিজের সন্তানকে কুড়িয়ে পাওয়া বলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন, ভাবা যায় না। ওই মহিলা কেন এমন করলেন, তা খতিয়ে দেখব।” |
রেলপুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা নিজেকে নেহা হাজরা ও পুরুলিয়া শহরের কসাইমহল্লার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ঠিকানায় খোঁজ করে ওই নামের কারওকে পাওয়া যায়নি। রাজকুমারের পড়শি মনোজ হাজরা, রীতা হাজরা, রিয়া হাজরাও ছবি দেখে নিশ্চিত, রাজকুমারবাবুর স্ত্রী নিজেই তাঁর সন্তানকে অনাথ বলে রেলপুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। রিয়াদেবী বলেন, “সোমবার খবরের কাগজে দিয়া ও তার মা’র ছবি দেখেই চিনতে পারি। কিন্তু সে কেন নিজের মেয়েকে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু বলে পুলিশের কাছে জমা দেয় বুঝতে পারিনি।” রাজকুমারবাবু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী’র বাপের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের জামাডোবায়। রাজকুমারবাবু বলেন, “রবিবার সেখান থেকেই মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন আমার স্ত্রী। তখনই গড়ধ্রুবেশ্বরে ট্রেন থেকে নেমে মেয়েকে ‘কুড়িয়ে পাওয়া শিশু’ বলে রেলপুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তারপর থেকে স্ত্রী’রও কোনও খোঁজ নেই।” |
রবিবার দুপুরে ওই মহিলাকে নিজের মোটরবাইকে করে গড়ধ্রুবেশ্বর থেকে আদ্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় গোপীনাথপুরের বাসিন্দা রউম আনসারি নামে এক যুবক। তিনি বলেন, “হঠাৎই দেখি এক মহিলা একটি শিশুকন্যাকে কোলে করে অসহায়ের মতো ঘুরছেন। তাই দেখে তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গিয়েছিলাম। তখন শুনলাম তাঁকে রেল কর্তৃপক্ষ আদ্রায় যেতে বলেছেন। কিন্তু তখন কোনও ট্রেন ছিল না। তাই আমি মোটরবাইকে করে তাঁকে নিয়ে যাই।” রউমের কথায়, “ওই মহিলা আমাকে বলেছিলেন বাচ্চাটিকে তিনি ট্রেনে কুড়িয়ে পেয়েছেন। তবে বাচ্চাটিকে তিনি কোলে আঁকড়ে রেখেছিলেন। ভেবেছিলাম কোনও শিশুর প্রতি কোনও মহিলার স্বাভাবিক স্নেহেরই প্রকাশ তা। ওই শিশুটি যে তাঁর নিজের সে কথা বুঝতে পারিনি।” তিনি বলেন, “আদ্রায় রেল পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দিয়ে বেরোনোর সময়ও তাঁর কোনও তেমন বিকার দেখিনি। বরং তারপরে যখন তিনি বললেন শ্বশুরবাড়ি যাবেন, আমি মোটরবাইকে করে কিছুটা এগিয়ে দিলাম। তখনও তাঁকে দেখে বুঝতে পারিনি, নিজের সন্তানকেই ছেড়ে রেখে চলে যাচ্ছেন।” ওই মহিলা রউমকে বলেছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ি ঝাড়খণ্ডের ভাগা। রউম তাঁকে পৌঁছে দেন ঝাড়খণ্ডের ভাঁওড়া পর্যন্ত।
রাজকুমারবাবুর শাশুড়ির সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। আর নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে রেলের স্লিপার কারখানার শ্রমিক রাজকুমার বললেন, “স্ত্রী কেন নিজের মেয়েকে এমন ভাবে ছেড়ে দিয়ে গেল জানি না। এর আগেও ও পালিয়েছিল। তবে মেয়েকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি।” |