রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় আক্ষেপ করেছেন, “অন্য ভাবে অত্যাচারিত হলে মেয়েরা জানান। অথচ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ ও কন্যাভ্রূণ নষ্টের কথা কেন বলেন না, সেটা আশ্চর্যের” (‘ভ্রূণ লিঙ্গ পরীক্ষার গুপ্ত দাপটই সামনে আনলেন রঞ্জনা’ (৮-৮)। সত্যিই কি এটা আশ্চর্যের? রঞ্জনা ও তাঁর স্বামী ব্যতিক্রম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কন্যাভ্রূণ হত্যা অজাতা কন্যার বাবা-মার আগ্রহেই হয়। এর কারণ অনেকগুলি।
প্রথমত, পণপ্রথা। যত দিন পণপ্রথা থাকবে, তত দিন কন্যাভ্রূণ হত্যাও থাকবে। আবার ছেলেরা অর্থকরী পেশায় শিক্ষা নিয়ে রোজগার করবে, মেয়েরা সাধারণ শিক্ষা নিয়ে প্রধানত গৃহবধূ হবে, এই ধারণা থাকলে কন্যার বিবাহচিন্তাও থাকবে এবং ফলে পণপ্রথাও থাকবে।
দ্বিতীয়ত, ছেলে রোজগার করে বাবা মাকে দেখবে, মেয়ে দেখবে না বা দেখতে চাইলেও তা সম্ভব হবে নাএই বিশ্বাসও কন্যাহত্যা ও কন্যাভ্রূণ হত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। এটাও তত দিন থাকবেই, যত দিন মেয়েরা যথেষ্ট রোজগার করতে শুরু না-করে এবং নিজের টাকার উপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না-হয়। |
তৃতীয়ত, বুদ্ধি ও অন্যান্য যোগ্যতার দিক থেকে কন্যা একটু নিচু স্তরের, এটাও অনেক বাবা-মাই বিশ্বাস করেন এবং সেই বিশ্বাস থেকেই ‘নিচু স্তরের’ ভ্রূণটিকে সানন্দে শেষ করে দেন। এই তিন চিন্তাধারা চলতে থাকলে কন্যাহত্যা, কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং জন্মাতে দিলেও জন্মের পর কন্যাসন্তানের প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা কমার আশা আকাশকুসুম।
বস্তুত, পুরো ব্যপারটাই একটা ‘ভিশাস সার্কেল’। ‘অযোগ্য’ মনে করে কন্যাসন্তানের সর্বাঙ্গীন বিকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে না। ফলে সে এমন ভাবে বড় হচ্ছে যে, ‘পণ দিয়ে বা খাটো হয়ে বিয়ে করব না’ বলার যোগ্যতা তার থাকছে না। ফলে, ওই ভাবেই বিয়ে হচ্ছে। তা ছাড়া যে-বাবা নিজের বিয়েতে পণ নিয়েছেন এবং যে-মা নিজের বিয়েতে পণ দিয়েছেন, অনিবার্য ভাবেই তাঁরা নিজেদের কন্যাদের বাঁচতে দিতে চাইছেন না। সুস্মিতা ভট্টাচার্য। কলকাতা-২৬ |