বিহারের রাজনীতিতে তাঁরা পরস্পরের রাজনৈতিক শত্রু। কিন্তু আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন লালু প্রসাদ ও নীতীশ কুমার যুযুধান দু’পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইছে তৃণমূল।
গত এক দশকের বিভিন্ন সময়ে দুই নেতাই রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। তৃণমূল তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লালু-নীতীশরা রেলমন্ত্রী থাকার সময় যে সব রেল প্রকল্পের সূচনা, সেগুলির উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হবে সংশ্লিষ্ট দুই নেতাকেই।
ইউপিএ সরকারের প্রথম পর্বে লালু প্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিহারে তিনটি রেল কারখানার ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে ছাপরার রেলের চাকা তৈরির কারখানাটির নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। চলতি মাসের শেষেই ওই প্রকল্পটি উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে রেল মন্ত্রকের। তাই সেই প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদকে মুখ্য অতিথি হিসেবে থাকার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়।
লালু প্রসাদ না হয় কেন্দ্রে ইউপিএ-র সমর্থক দল। কিন্তু এনডিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল জেডিএউ নেতা নীতীশ কুমারকে এই ভাবে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ কী? |
রেল মন্ত্রক বলছে, এই আমন্ত্রণ সৌজন্যের খাতিরেই। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের বক্তব্য, “ওই নেতারাই সে সময়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে ওই প্রকল্পগুলির ঘোষণা করেছিলেন। ফলে প্রকল্পগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।”
তা ছাড়া, নীতীশ কুমার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানোর পথে যায়নি রেল মন্ত্রক। যে সিদ্ধান্তে সে সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এখন এই ‘আমন্ত্রণ-নীতি’-র পিছনে রেল মন্ত্রক সৌজন্যের যুক্তি দিলেও রাজনৈতিক সূত্র কিন্তু বলছে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেননা, লোকসভা নির্বাচন প্রায় এসে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেশের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে ফের জোট সরকার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে আগামী দিনে আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্ব আরও বাড়তে চলেছে। তৃণমূল নেতৃত্বও মনে করছেন, আগামী দিনে কেন্দ্রে সরকার গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে তাঁদের দল। সে সময়ে লালু প্রসাদ থেকে নীতীশ, সব পক্ষেরই সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে নীতীশ কুমার বিজেপি-র সঙ্গে জোট গড়ে বিহারে সরকার চালালেও নিজের একটি স্বতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি গড়তে সক্ষম হয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি যে বিজেপি-র সঙ্গ ত্যাগও করতে পারেন, সেই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। তাই আগ বাড়িয়ে নীতীশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে নীতীশের। সেই সুসম্পর্ককে আরও মজবুত করতে চাইছে তৃণমূল শিবির।
তাই রেলমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও তাঁর সময়ে ঘোষিত হরনৌত রেল প্রকল্পের উদ্ধোধনে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন মুকুল রায়। এনডিএ আমলে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নিজের জেলা নালন্দার কাছে হরনৌতে একটি কোচ কারখানার ঘোষণা করেছিলেন নীতীশ।
আজ মুকুল জানিয়েছেন, “সেটিরও কাজ শেষ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই নীতীশকে চিঠি লিখে ওই অনুষ্ঠানে থাকার জন্য অনুরোধ করেছি।” |