নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
কুমোরটুলি আজও অধরা। বাড়ির এক চিলতে উঠান কিংবা রাস্তার ধারে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে প্রতিমা গড়তে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বালুরঘাটের মৃ্তশিল্পীরা। দীর্ঘদিন থেকে এক ছাতার তলায় কুমোরটুলি গড়ার আর্জি জানিয়ে হতাশ ওই শিল্পীরা রাজ্যে পাল বদলের পরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু দুর্দশা ঘোচার মতো ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। বালুরঘাট মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক বাবুন দাস বলেন, “স্থায়ী কুমোরটুলি না-থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বালুরঘাটে ছোট বড় মিলে ৬০ জন শিল্পীর অধিকাংশের প্রতিমা গড়ার কারখানা বলতে নিজের বাড়ির এক চিলতে উঠান। ঝড় জল ঠেকাতে টিন ও পলিথিনের ছাউনি ভরসা।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বালুরঘাট সফরে গেলে মৃৎশিল্পী সংগঠনের তরফে ওই সমস্যার কথা জানানো হয়। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুরঘটে গেলে মৃৎশিল্পীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কুমোরটুলি গড়ে তোলার আবেদন জানাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ মেলেনি। ওই পরিস্থিতিতে শহরের প্রাচ্যভারতী এলাকার শিল্পী শ্যামল সাহার মতো অনেকেই হতাশ হয়েছেন। প্রতিমা তৈরির মতো শ্যামলবাবুর বাড়িতে জায়গা নেই। রাস্তার ধারে পথবাতির আলোয় রাত জেগে প্রতিমা গড়েন তিনি। ওই শিল্পীর অভিযোগ, প্রত্যেকে শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। কুমোরটুলি না থাকায় শুধু যে প্রতিমা গড়তে অসুবিধা হচ্ছে সেটাই নয়। দাম নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। রমেশ পাল, দেবেশ সরকারের মতো শিল্পীরা জানান, ছড়িয়ে থাকা শিল্পীদের কারখানায় গিয়ে উদ্যোক্তারা দর কষাকষি করেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের বলা দামে রাজি হতে হচ্ছে। কারণ, না-হলে বায়না মিলবে না। প্রতিমা আসবে কৃষ্ণনগর কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে। রমেশবাবু বলেন, “এখানে এক ছাতার তলায় প্রতিমা তৈরির সুযোগ থাকলে পুজো উদ্যোক্তারা যাচাই করার সুযোগ পেতেন। দাম ঠিক করার ক্ষেত্রেও সমস্যা থাকত না।” শহরের সাড়ে তিন নম্বর এলাকায় একটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেল শিল্পী রমেন পাল ও তাঁর ভাই নান্টু পাল বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করছেন। তাঁরা জানান, দুর্গা প্রতিমার বায়না এখনও মেলেনি। পুজো উদ্যোক্তারা আলোচনায় বসে কবে ডাকবেন সেই আশায় বসে আছেন। একই দশা হয়েছে মৃৎশিল্পী মনা পাল, ও ছোটন দাসদের। বিশ্বকর্মা তৈরির পরে ফুটপাতে নিয়ে বসবেন ওই শিল্পীরা। বিক্রি না হলে ঠেলা ও রিকশায় তুলে ফের নিয়ে যেতে হবে নিজেদের আস্তানায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃৎশিল্পী বাবু দাস বলেন, “কবে কুমোরটুলি হবে আর কবে আমাদের দুর্ভোগ ঘুচবে কে জানে!” |