কলকাতা থেকে খোদ স্বাস্থ্যসচিব সকাল পৌনে ৯টায় কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে যেতে পারলেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক, অচিকিৎসক কর্মীরা সাড়ে ৯টাতেও পৌঁছতে পারলেন না নিজেদের কাজের জায়গায়। রোগীদের অভিযোগ, শুধু সোমবারের ব্যাপার নয়, এটাই রোজকার রুটিন। ডাক্তার তো পাওয়াই যায় না। কর্মীদের কাছ থেকেও কাজ পাওয়া মুশকিল। ওষুধ, স্যালাইন মেলেই না। এমনকী সামান্য গজ-তুলোও পাওয়া যায় না।
এ দিন আচমকাই কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার বেহাল দশাই বেআব্রু হয়ে গেল রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কাছে। হাসপাতালে বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সুপারকেও ঘরে না-পাওয়ায় দৃশ্যতই বিরক্ত হন সঞ্জয়বাবু। হাসপাতাল-চত্বরে অবাধে শুয়োর চরে বেড়াতে দেখে তাঁর বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। অধ্যক্ষ ও সুপারকে পরে সে-কথাও সরাসরি জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আচমকা হাজির হয়ে সেখানকার কাজের পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। একই ভাবে এ দিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে পৌঁছে যান সঞ্জয়বাবু। কিছু ক্ষণ হাসপাতালে ঘোরার পরে তিনি যান বহির্বিভাগে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীদের ভিড় সামলাতে সাড়ে ৯টায় গোটা হাসপাতালে হাজির ছিলেন মাত্র দু’জন চিকিৎসক। ঘুরে ঘুরে সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখেন স্বাস্থ্যসচিব। কথা বলেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে। কলকাতা থেকে ‘বড় কর্তা’ এসেছেন শুনে রোগীরাও স্যালাইন ঠিকমতো না-মেলা, চিকিৎসক কম থাকার মতো সমস্যার কথা জানান। অভিযোগ করেন, সামান্য গজ-তুলো পর্যন্ত বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
হাসপাতালের নার্সেরাও স্বাস্থ্যসচিবকে জানান, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ৫৫ জনের শয্যায় ১৫০ রোগীকে রাখতে হয়। ফলে সকলকে যথাযথ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। সকলের অভাব-অভিযোগ শুনে সচিব সটান চলে যান সুপারের ঘরে। সুপার তখন নিজের ঘরে ছিলেন না। স্বাস্থ্যসচিবের জরুরি তলব পেয়ে কিছু ক্ষণ পরে তিনি সেখানে পৌঁছন। এর পরে অধ্যক্ষের ঘরে অধ্যক্ষ ও সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন সঞ্জয়বাবু।
এ দিনের পরিদর্শনের ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব নিজে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে হাসপাতালের সুপার নিরুপম বিশ্বাস বলেন, “স্বাস্থ্যসচিব সব দেখে গিয়েছেন। উনি আসায় এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অনেকটাই উপকৃত হল। কারণ যে-সব খামতি আছে, সেগুলো কী ভাবে মেটানো যায়, সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন উনি। আমরা সেই ভাবেই কাজ করব।” |