শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও রোগ মোকাবিলার সব ব্যবস্থা চালু রাখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সেই সংক্রান্ত নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
এই অবস্থায় পুরসভার আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৪ জন চিকিৎসককের একটি দলকে ডেঙ্গি দমনের কাজে পাঠাচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি, কাউন্সিলরদের দেওয়া তালিকা অনুসারে ১২ জন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসককেও ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে সামিল করার প্রক্রিয়া চলছে।
কিন্তু এ সবের পরেও সর্বত্র যে যথাযথ সতর্কতা নেই, তার প্রমাণ মিলল এ দিন সল্টলেক উত্তর থানার আবাসনে গিয়েই। নর্দমা দিয়ে না বেরিয়ে নোংরা জল সেখানে জমে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। সাফ করা হয় না চারপাশে জমে থাকা ঝোপজঙ্গলও। ডেঙ্গি প্রতিরোধে মশার তেল পর্যন্ত ছড়ানো হচ্ছে না ওই চত্বরে। আবাসনের বাসিন্দা রীতা সিংহ বলেন, “এখানে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘ দিন ঝোপজঙ্গল সাফ করা হয় না। পোকামাকড় থেকে সাপ, সবই রয়েছে। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও ফল হয়নি।” |
কুড়ি জনেরও বেশি পুলিশকর্মীর জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিসি (সদর) সুূব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, দুই থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি-ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে ফগিং মেশিন, কর্মী-সহ পরিকাঠামোয় নানা সমস্যা রয়েছে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।”
শুধু পুলিশ আবাসনই নয়, সল্টলেক স্টেডিয়াম চত্বরের ছবিটাও এক রকম। ঝোপজঙ্গল গজিয়ে উঠেছে একাধিক জায়গায়। তিন, চার ও পাঁচ নম্বর গেটের পাঁচিলের কাছে বড় অংশ নিয়ে গজিয়ে ওঠা ঝোপ পরিণত হয়েছে মশার আঁতুড়ঘরে। এখানেই ডেকরেটর সংস্থাগুলির বাঁশ রাখার অস্থায়ী গুদাম। সেখানেও জল জমে রয়েছে দীর্ঘ দিন। স্টেডিয়ামের শৌচাগার এবং নর্দমাগুলিতেও জল জমে থাকার অভিযোগ করেছেন প্রাতর্ভ্রমণকারী এবং খেলা দেখতে আসা লোকজনও।
এই অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ইতিমধ্যেই স্টেডিয়ামের ভিতরে ও বাইরে সাফাইয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। জমা জল দ্রুত সরানোর নির্দেশ দিয়েছি। জঙ্গলও কাটা হবে।”
এ দিকে, গত দু’দিনে কলকাতায় আরও দু’জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রাজীব বিশ্বাসের দাবি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার রোহিত কর (১৪) নামে এক কিশোর রবিবার আর জি কর হাসপাতালে মারা যায়। ওই কিশোরের রক্ত পরীক্ষায় (এনএস১) ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। এ দিন দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে নিখিল রায় নামে এক প্রৌঢ়ের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয় বলেও নার্সিংহোম সূত্রে খবর।
যদিও এ সবের পরেও কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ কমছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের বক্তব্য, শহরের ১২টি ক্যাম্প ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রক্ত পরীক্ষা করাতে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এতেই বোঝা যায় যে, ডেঙ্গি কমছে। |
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন চত্বর |
পুরসভায় বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রূপা বাগচীর দাবি, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপু দাস ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এনএস-১ টেস্টে পজিটিভ এসেছে। তাঁর অনুচক্রিকার পরিমাণ দু’লক্ষ ১০ হাজার থেকে কমে ১ লক্ষ দু’হাজার হয়েছে। যদিও এই তথ্য অস্বীকার করে অতীনবাবু পাল্টা দাবি করেছেন, “ওঁর ডেঙ্গি হয়নি। লিভারের অসুখে ভুগছেন তিনি।” এর আগে ডেঙ্গি নিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের বক্তব্য না শোনায় একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন রূপাদেবীর দাবি, মেয়র অবশেষে সেই দাবি মেনে নিয়েছেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বৈঠক হবে।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন অভিযোগ করেন, “বারবার বলা সত্ত্বেও সরকার ডেঙ্গি নিয়ে ঠিক রিপোর্ট দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে ৩৬ জন মারা গিয়েছেন, কলকাতায় ২৭ জন। ডেঙ্গির সব চেয়ে বেশি প্রকোপ যে বার হয়েছিল বলা হচ্ছে, তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ছয় হাজার। মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার যে অনুপাত থাকে, তা সর্বোচ্চ আক্রমণের সময়ের চেয়ে এ বার দ্বিগুণ। সবটাই উদ্বেগজনক ব্যাপার।” ডেঙ্গি-প্রশ্নে এ দিনই সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে পুরভবন পর্যন্ত মিছিল করে এসইউসি।
|