ডুয়ার্সের বীরপাড়া থানার একটি বধূ নির্যাতনের মামলার তদন্ত প্রভাবশালী একটি মহলের চাপে থমকে গিয়েছে শুনে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারকে সতর্ক করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার সকালে সোনাল অগ্রবাল নামের ওই গৃহবধূ ও তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন মন্ত্রীর কলেজপাড়ার বাড়িতে গিয়ে সবিস্তারে অভিযোগ জানান। তা জেনে সঙ্গে সঙ্গেই জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারকে ফোন করে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “বধূ নির্যাতনের মামলা হয়েছে। আইন মেনে যা করণীয় করতে হবে। তাতে কোন পক্ষ কত প্রভাবশালী, কে কী অনুরোধ করল সে সব ভাবার অবকাশ নেই। পুলিশকে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।” পাশাপাশি, নির্যাতনের জেরে অসুস্থ বধূর উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। ওই নির্দেশের পরে এ দিন দুপুরেই বীরপাড়া থানার পুলিশ শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি এলাকায় সোনালদেবীর স্বামী মণীশবাবুর খোঁজে তল্লাশি চালায়। কিন্তু, তাঁর কোনও হদিস মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন,“আমরা মণীশ অগ্রবালকে গ্রেফতার করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি তাকে গ্রেফতার করতে পারব।”
পুলিশ সূত্রের খবর, সোনালদেবী ২৬ জুলাই বীরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের জানান, তাঁর উপরে স্বামী মণীশবাবু ও তাঁদের বাড়ির লোকজনেরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। পুলিশ মামলা দায়ের করলেও কেউ গ্রেফতার হননি। সোনালদেবীর অভিযোগ, তাঁদের উপরে নানা মহল থেকে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এমনকী, পুলিশের উপরেও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ চাপ সৃষ্টি করেন বলে সোনাল দেবীদের বাড়ির লোকজনদের অনেকেরই অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হলে আলোড়ন পড়ে। এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজেও দ্রুত পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। বীরপাড়ার নানা মহলেও বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বীরপাড়ার কংগ্রেস নেতা মান্না জৈনের সন্দেহ, “প্রভাবশালী লোকজন ও বড় নেতাদের একাংশের চাপে পুলিশের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।” তাঁর প্রশ্ন, অভিযোগ দায়েরের পরেও অন্যতম অভিযুক্তকে বীরপাড়ায় দীর্ঘদিন দেখা গেলেও কেন গ্রেফতার করা হয়নি? একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ধনীদের জন্য পৃথক আইন হয় নাকি?” পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বীরপাড়ার আরএসপি বিধায়ক কুমারী কুজুর। তাঁ কথায়, “একজন মহিলা নির্যাতিতা হবার পর পুলিশ কেন অভিযুক্তদের ধরতে গড়িমসি করবে? আমরা সব জায়গায় বিষয়টি জানাব।” জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ দায়েরের পরেও কেন অভিযুক্তদের ধরতে থানার তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। |