নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি থানার ১০০ মিটারের মধ্যে একটি প্রাচীন মন্দিরের সর্বস্ব চুরির ঘটনায় শহর জুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। রবিবার গভীর রাতে শিলিগুড়ি থানার লাগোয়া মহাবীরস্থানের মহাবীর মন্দিরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রুপোর তৈরি দেবদেবীর মুকুট, তামা-পিতলের বাসনপত্র ছাড়াও ২৬টি ধাতুর মূর্তি চুরি হয়েছে। এরমধ্যে ৭টি প্রাচীন অষ্টধাতুর মূর্তি রয়েছে। শিলিগুড়ি থানার পুলিশের নজরদারির অভাবেই থানার পাশেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের অভিযোগ। বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সোমবার দুপুরে মন্দিরটিতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি মন্দিরটি ঘুরে দেখার পাশাপাশি মন্দির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই মন্ত্রী জংশন এলাকার নিজের দফতরে ডেকে পাঠান শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমারকে। প্রায় ঘণ্টা খানেক কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে শহরের আইন শৃঙ্খলা আটোসাঁটো করার পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি, গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রধাননগর থানার নর্দমা বাগান এলাকায় দুটি বাইক চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এরমধ্যে রবিবার রাতে বাড়ির গেটে তালা তুলে ভিতর থেকে একটি বাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “পুলিশকে মন্দিরের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করার জন্য বলেছি। কিছু ঘটনা ঘটেছে তা ঠিক। এ দিন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সে সব নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি আরও ভাল করতে কী কী করা দরকার সে সব ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।” মন্ত্রীর জানান, সদ্য কমিশনারেট গঠন হয়েছে। আরও অনেক পুলিশ অফিসাররা আসবেন। অন্তত ৬ মাস তার জন্য সময় দিতে হবে। তা হলেই বাসিন্দারা বুঝতে পারবেন এর ফলে তারা কতটা লাভবান হলেন। শহরের রেলগেট এলাকার উড়ালপুলের নিচেই রয়েছে মহাবীর মন্দিরটি। বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রায় ১০০ বছরের পুরানো এই মন্দিরের নামেই এলাকার নামকরণ মহাবীস্থান হয়। মন্দিরটি পুরোপুরি ব্যবসায়ীক এলাকার মধ্যে রয়েছে। পাশেই শিলিগুড়ি থানা থাকায় প্রায় ২৪ ঘন্টা এলাকায় পুলিশ ভ্যান ঘোরাঘুরি করে। মূর্তি, সরঞ্জাম মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার চুরি করেছে দুষ্কৃতীরা। এদিন সকালে মন্দিরের পুরোহিত তেজনারায়ণ মিশ্র ভোর ছয়টা নাগাদ মন্দিরটি খুলে ভিতরে ঢুকে লণ্ডভণ্ড অবস্থা দেখে মন্দির কমিটির সদস্যদের খবর দেন। মন্দির কমিটির সদস্য অরবিন্দ প্রসাদ, অরুণ গুপ্তা জানান, থানার দিকের মন্দিরের দেওয়ালের উপরের অংশ গ্রিল এবং তার জালি রয়েছে তা কেটে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকেছে। সামনের মূল গেটের গ্রিল ঠিকই ছিল। প্রণামী পাত্র, রুপোর মুকুট, পিতল, স্টিল, কাঁসার বাসনপত্র ছাড়াও দুষ্কৃতীরা ২৬টি মূর্তি নিয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে বহু পুরানো বুদ্ধ, কৃষ্ণের অষ্টধাতুর মূর্তিও রয়েছে। পরে মন্দিরে ভিতর দিকে পিছনের অংশের দরজা খুলে টাউন স্টেশন এলাকার দিক দিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে মন্দিরে যান স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের কাউন্সিলর শর্মিলা দাস। তিনি বলেন, “কমিশনারেট হওয়ার শহরের কী অবস্থা তা দেখতেই পাচ্ছি। ছিনতাই, চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে। পুলিশের উপর আর মানুষ ভরসা রাখতে পারছে না।” বিকালে উড়ালপুল নিচের এলাকায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দলীয় সভায় চুরির ঘটনায় পুলিশের উদাসীনতাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। সকালেই মন্দির কমিটির তরফে পূজারি শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা প্রতিটি ঘটনারই তদন্ত করছি। মন্দিরের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” |