|
অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ এখনই
অসম্ভব, কেন্দ্রকে হাইকোর্ট
অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও জলপাইগুড়িতে এখনই অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে চিঠি লিখে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল। তা ছাড়া সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন দু’বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁর সরকারের দেওয়া বিজ্ঞাপনই বলছে, কাজ শেষ হতে প্রায় তিন বছর লাগবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। তার আগেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। তবে
যে হেতু ওখানে অস্থায়ী ভবন প্রস্তুত, তাই পুরনো বাড়িটিতেই বেঞ্চ চালু করার জন্য রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি জারির ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রকে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য।
অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করে দিতে ১ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানেও বিচারপতি পটেলের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অবশ্য তার আগেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে চিঠি লিখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, অস্থায়ী ভবনে এখনই সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের চিঠির প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। আর তার উত্তরেই বিচারপতি পটেল ওই অভিমত প্রকাশ করেন।
সলমন খুরশিদকে প্রধান বিচারপতি চিঠিটি দেন গত ২৩ অগস্ট (নম্বর: ডিও ১১- সিজে ২০১২)। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন নিয়ে এখনই কোনও আশ্বাস দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সার্কিট বেঞ্চের জন্য চিহ্নিত অস্থায়ী ভবনের পরিকাঠামো যথাযথ নয়। ১০ অগস্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁকেও আমি বলেছি যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করা সম্ভব নয়। তিনি আমার সঙ্গে একমতও হন।’ বিচারপতি পটেল খুরশিদকে আরও লিখেছেন, ‘পুরো বিষয়টি আপনাকে জানালাম। এ অবস্থায় আপনি মনে করলে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য উদ্যোগী হতে পারেন।’
পাশাপাশি রাজ্যকেও হাইকোর্ট চিঠি দিয়ে বলেছে, সার্কিট বেঞ্চ শুরু করতে গেলে ৪৩টি দফতরকে দরকার। জলপাইগুড়ির অস্থায়ী ভবনে অত জায়গা নেই, ওখানে প্রয়োজনীয় কর্মীও নিয়োগ করা হয়নি। কোন কোন অভিজ্ঞ আদালত-কর্মী জলপাইগুড়ি যেতে রাজি, তা-ও জানতে চাওয়া হয়নি।
কেন্দ্র ও রাজ্যকে লেখা কলকাতা হাইকোর্টের এই দু’টি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও জলপাইগুড়ির অস্থায়ী বাড়িতে সার্কিট বেঞ্চ এখনই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বস্তুত অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ কবে চালু হবে, অথবা আদৌ চালু হবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেও স্থায়ী ভবনের কাজ যে দু’বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে না, সরকারি বিজ্ঞাপন থেকেই সেটা পরিষ্কার। স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে গত ২৭ জুলাই বিভিন্ন সংবাদপত্রে রাজ্য পূর্ত দফতরের উত্তরবঙ্গ বিভাগের ২ নম্বর সার্কেলের দেওয়া ওই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভবন নির্মাণে ৫৭ কোটি ১৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। কাজ শেষ করতে হবে ১ হাজার দিনের মধ্যে।
অর্থাৎ কাজ সম্পূর্ণ করার সময়সীমা সরকারই ধার্য করছে প্রায় তিন বছর! টেন্ডার চূড়ান্ত করে কাজের বরাত এখনও দেওয়া হয়নি। উপরন্তু স্থায়ী ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের যে শংসাপত্র প্রয়োজন, তা-ও রাজ্যের হাতে আসেনি।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সব তথ্যও কলকাতা হাইকোর্টের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের এক মুখপাত্রের মন্তব্য, “নির্মাণকাজ এ মাসে শুরু হলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করা কার্যত অসম্ভব।” |