একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা-সহ সার্বিক ভাবে ‘বিপর্যস্ত’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে সরকার বিরোধিতায় ‘একই সুর’ শরিক কংগ্রেস ও বিরোধী সিপিএমের।
ধর্ষিতাদের ক্ষতিপূরণ নয়, ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ‘নিরাপদ’ করতে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য।
ধর্মতলায় সোমবার দলের মানবাধিকার সংগঠনের অবস্থান মঞ্চে প্রদীপবাবু বলেন, “মহিলাদের সম্মান রক্ষার্থে রাজ্য সরকারের উচিত প্রহরীর ভূমিকা নেওয়া। ভাষণ বা ধর্ষিতাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে নয়, যাতে ধর্ষণকারীরা কঠোর শাস্তি পায় তা সুনিশ্চিত করাই সরকারের কাজ। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী ভাবে উন্নত করা যায়, তা আলোচনা করতে সর্বদল বৈঠক ডাকলে খুশি হব।”
বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র প্রায় একই সুরে এ দিন আলিমুদ্দিনে বলেছেন, “নতুন ঘোষণা হয়েছে ক্ষতিপূরণের। ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে, জানি না! মুখ্যমন্ত্রী ‘সাজানো ঘটনা’ বলার পরে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করা হবেই বা কী করে, জানি না! খুবই সস্তা হয়ে গিয়েছে মান-ইজ্জতের দাম! কারণের গভীরে না-গিয়ে এই ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।” |
আবার ধর্ষণের ঘটনাকে যে ভাবে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘সাজানো’ বলছে, সূর্যবাবুর মতো তার সমালোচনা করেছেন প্রদীপবাবুও। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর অন্য মন্ত্রীরা বলছেন, সংবাদপত্র ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে বলছে। কিন্তু ক্রাইম রেকর্ডের তথ্যই বলছে, নারী নির্যাতনে এ রাজ্য দেশের মধ্যে শীর্ষে। বাম আমলে যে ভাবে নারী নির্যাতন হত, এখনও কেন সেই একই অভিযোগ উঠছে?” নতুন সরকারের জমানায় খুন-সন্ত্রাস বাড়ছে বলেও একযোগে সরব হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেস।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কংগ্রেস যে সর্বদল বৈঠকের দাবি তুলেছে, সেই ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “শুধু আইনশৃঙ্খলা কেন? অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই আমরা সর্বদল বৈঠকের দাবি করেছিলাম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদল আলোচনা চান না। এখন সরকারের শরিকেরা বলছে। দেখি সরকার কী করে!”
নির্যাতিতা মহিলাদের সুবিচারের জন্য প্রতি রাজ্যে একটি কমিশন গড়তে বলেছিল কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন। অন্যান্য রাজ্যে তৈরি হলেও এ রাজ্যে তা হয়নি বলে উল্লেখ করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। প্রসঙ্গত, ধর্ষিতাদের জন্য ক্ষতিপূরণের যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা করেছেন, তা প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার ও মহিলা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের রূপরেখা মেনে গৃহীত প্রকল্প। তা হলে সমালোচনার কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী কেন?
বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর বক্তব্য, “কিছু প্রকল্প আছে, কেন্দ্রীয় সরকারেরও কিছু রূপরেখা আছে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘোষণা করেছেন, তিনি বা তাঁর মন্ত্রিসভার কেউ এক বারও কেন্দ্রের কথা বলেননি। এখন পাপস্খালনের জন্য কেন্দ্রের কথা বলা হচ্ছে! কেন্দ্রের প্রকল্প হলে তাদেরও সমালোচনা প্রাপ্য। কিন্তু রাজ্য সরকার তো বাহাদুরি নেওয়ার চেষ্টা করেছিল! এখন চাপে পড়ে এ সব বলা হচ্ছে!” |