খাজুরা পঞ্চায়েত
তৃণমূল প্রধানকে সরানোর দাবিতে সরব দলীয় সদস্যরা
দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানকে অপসারণের দাবি জানালেন দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা। তাঁদের দাবিতে সামিল হয়েছে সিপিএমও। ঘটনাটি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের খাজুরা পঞ্চায়েতের। বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত জানান, ওই পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান মহেশ্বর বাউরি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতের দশটি আসনের মধ্যে ৬টিতে জিতেছিল তৃণমূল। চারটি আসন পায় সিপিএম। কিন্তু ২০০৯ সালে পঞ্চায়েতের ততকালীন তৃণমূলের প্রধান হেমন্ত বাউরি ও উপপ্রধান তারাপদ বাউরির বিরুদ্ধে গাছের চারা কেনা সংক্রান্ত ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। প্রশাসন তদন্তে নেমে প্রধান, উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েতের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন প্রধান ও উপপ্রধান। কয়েকমাস জেল খাটেন তাঁরা। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ফের দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন দলেরই পঞ্চায়েত সদস্যরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ফলে আগের প্রধান ও উপপ্রধানের পরিবর্তে খাজুরা তৃণমূলেরই মহেশ্বর বাউরিকে প্রধান হিসাবে মনোনীত করেছিলেন জেলাশাসক। প্রায় দেড় বছর ধরে মহেশ্বরবাবুই পঞ্চায়েত পরিচালনা করছেন। কিন্তু গত দু’মাস ধরে মহেশ্বরবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জানিয়ে আসছেন পঞ্চায়েতের তৃণমূলেরই পাঁচ ও সিপিএমের চার জন সদস্য। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে নিজের মর্জি মাফিক কাজ করছেন প্রধান। এ ছাড়াও পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজ সম্পূর্ণ না হলেও টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কোনও কাজ না হওয়া সত্বেও এক ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নলকূপের বাতিল লোহার পাইপ নিলাম করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই দেখা যায় রাতারাতি সেই পাইপ উধাও হয়ে গিয়েছে। কুড়ি হাজার টাকার বেশি মূল্যের কাজ দরপত্র আহ্বান না করেই করানো হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
প্রাক্তন উপপ্রধান তারাপদ বাউরির দাবি, “বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরে গত ২২ অগস্ট পঞ্চায়েতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক ও ব্লকের বিডিও সেই সভাতে প্রধানের অপসারণের বিষয়টি আলোচনার সূচিতে ছিল। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী পরের দিনই মহকুমাশাসকের কাছে বর্তমান প্রধানকে অপসারণ করে স্থায়ী প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের আবেদন বেশিরভাগ সদস্য করেছেন। কিন্তু তার পরেও প্রশাসন মহেশ্বরবাবুকেই ফের প্রধান হিসাবে মনোনীত করেছেন।” প্রাক্তন প্রধান হেমন্ত বাউরি বলেন, “মহেশ্বরবাবুর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের দশ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জনই দুর্নীতির অভিযোগ করে অপসারণের দাবি করার পরেও প্রশাসন প্রধান নির্বাচন না করে দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে।” ঘটনা হল নাম না করলেও মহেশ্বরবাবুকে দলের নেতৃত্বের একাংশ মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূলের ওই বিক্ষুব্ধ অংশ। বিষয়টি নিয়ে বিশদে মন্তব্য করতে চাননি দলের জেলা সভাপতি তথা রজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি শুধু বলেন, “খাজুরা পঞ্চায়েতের বিষয়টি দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
অবশ্য মহেশ্বরবাবুর দাবি, “একশো দিনের কাজের টাকা দেওয়ার ঘটনায় মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ওই ক্ষেত্রে চেকটি পঞ্চায়েত থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং নিয়ম মেনে স্বচ্ছভাবে পঞ্চায়েত পরিচালোনা করা হচ্ছে।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “যাঁরা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েছেন তাঁরাই পঞ্চায়েত পরিচালনায় ফের দুর্নীতি করতে চাইছেন। আমি স্বচ্ছভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করছি বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আমাকে সরানোর চক্রান্ত শুরু করা হচ্ছে।” রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “খাজুরা পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু তাঁকে অপসারন করার ক্ষেত্রে কিছু আইনি পক্রিয়া রয়েছে। সেগুলি সম্পূর্ণ করার পরেই কোনও প্রধানকে অপসারণ করা যায়।” ফের এক মাসের জন্য মহেশ্বরবাবুকে মনোনীত করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের যুক্তি, অপসারণের দাবি নিয়ম মেনে স্থানীয় স্তরের প্রশাসনের কাছে আসার আগেই জেলাস্তর থেকে ফের মহেশ্বরবাবুকে মনোনীত করা হয়ে গিয়েছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.