বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ‘পাচার’, ধৃত আরও এক
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাত্রসায়রের তরুণীকে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে পাচার করা হয়েছিল। উদ্ধারের পর ওই তরুণী এমনটাই জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। ওই তরুণীকে আটকে রাখার অভিযোগে পুলিশ মোরাদাবাদের এক মাঝ বয়সী মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মহিলার নাম আশাদেবী। রবিবার সন্ধ্যায় ওই তরুণী এবং ধৃত মহিলাকে পাত্রসায়র থানায় নিয়ে আসা হয়। তরুণীকে পাচারের অভিযোগে পুলিশ ইন্দাস থানার খাটরা-গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ খোকন ও শেখ আলমগীর এবং বীরভূমের দুবরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ জিয়ারুল ওরফে আপেল নামে তিন যুবককে গত মঙ্গলবার হুগলির আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি লজ থেকে গ্রেফতার করেছিল। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পাত্রসায়রের ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ এলাকায় বিক্রি করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ধৃতদের জেরা করে ‘অপহৃত’ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই তরুণীকে আটকে রাখার অভিযোগে মোরাদাবাদ থেকে আশাদেবী নামে এক মধ্যবয়সী মহিলাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।” পাচার চক্রের সঙ্গে ধৃত মহিলা জড়িত বলে অনুমান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ অগস্ট বাঁকুড়ায় গিয়েছিলেন পাত্রসায়র থানা এলাকার ওই তরুণী। ওই দিন থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। পরের দিন পাত্রসায়র থানায় ওই তরুণীর দাদা নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর পর গত শনিবার ওই তরুণী বাড়িতে ফোন করে জানান, তাঁকে জিয়ারুল, আলমগীর ও খোকন মোরাদাবাদের একটি কলোনিতে বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছে এবং সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। সেই ফোনের সূত্র ধরেই পাত্রসায়র থানার ওসি মানবেন্দ্রনাথ পাল গত মঙ্গলবার আরামবাগ থানার পুলিশের সহযোগিতায় ওই তিন জনকে ধরেন। মঙ্গলবার রাতেই ‘অপহৃত’ তরুণীর দাদা পুলিশের কাছে তাঁর বোনকে অপহরণ করে টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করা হয়েছে বলে ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই তরুণীর দাদার দাবি ছিল, চোখ দেখানোর জন্য বেশ কয়েকবার বোন বাঁকুড়ায় গিয়েছে। ওইদিনও একাই গিয়েছিল।
এই দাবির সঙ্গে পুলিশ অবশ্য একমত নয়। পুলিশের দাবি, প্রাথমিকভাবে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগে ওই তরুণীর সঙ্গে জিয়ারুল ওরফে আপেলের পরিচয় হয়েছিল। পুলিশের আরও দাবি, ওই তরুণী জানিয়েছেন, জিয়ারুল তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই দিন বাঁকুড়ায় যেতে বলেছিল। সেই মতো তরুণী সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে তাঁকে বাসে দুর্গাপুর হয়ে ধানবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন পরে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে নিয়ে গিয়ে একজনের কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তরুণীর কথায়, “প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিন্তু ওদের চালচলন সন্দেহজনক ঠেকায় একদিন সুযোগ বুঝে গোপনে একজনের ফোন থেকে বাড়ির মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি জানাই।”
পুলিশ সুপারের দাবি, “মশারি বিক্রির অছিলায় গ্রামে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় করেছিল ওই পাচারকারীরা। সুযোগ বুঝে ওই দিন বাঁকুড়া থেকে প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে প্রথমে ধানবাদে, পরে মোরাদাবাদে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তাঁকে বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে আসে পাচারকারীরা। কিন্তু তাঁদের একজনের মোবাইল নম্বর, ও নাম-ঠিকানা জেনে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। এরপর ওই তরুণী বাড়িতে যোগাযোগ করার ফলেই পাচারকারীদের ধরা গিয়েছে।” তিনি জানান, ‘অপহৃত’ তরুণীকে উদ্ধারের জন্য গত বুধবার রাতেই পাত্রসায়র থানার এক সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে একটি দল মোরাদাবাদ রওনা দেয়। শুক্রবার মোরাদাবাদের একটি কলোনিতে আশাদেবীর বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের দাবি। শুক্রবার মোরাদাবাদ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক পাঁচ দিনের ট্র্যানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার ধৃত মহিলাকে বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এদিনই বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে উদ্ধার হওয়া তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.