টেনিসের ওপেন যুগে স্টেফি গ্রাফের সবচেয়ে বেশি (২২টা) গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড সেরেনা উইলিয়ামস হয়তো ভাঙতে পারবে না। এ মাসেই ২৬ তারিখে ৩১ বছরে পা দেবে ও। রবিবারই মাঝরাতের ফাইনালে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর আজারেঙ্কার বিরুদ্ধে তৃতীয় সেটে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে সেরেনার যে অসাধারণ ৬-২, ২-৬, ৭-৫ জয়, সেটা যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ মেয়ের সিঙ্গলস খেতাব। সেরেনার চেয়ে বেশি বয়সে আমেরিকার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছে একমাত্র মার্গারেট কোর্ট। ’৭৩-এ ৩১ বছর ১ মাস বয়সে। স্টেফির চেয়ে সেরেনা এখনও সাতটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম পিছনে। অতগুলো জিততে ওকে কমপক্ষে আরও চার-পাঁচ বছর দাপটে খেলতে হবে। কিংবা দশ বছর আগের মতোই এক ক্যালেন্ডার ইয়ার-এ ‘সেরেনা স্ল্যাম’ (টানা চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়) ফের করতে হবে। দুটোই সেরেনার পক্ষে এই বয়সে করে দেখানোটা যথেষ্ট কঠিন। |
আমার কাছে অবশ্য রেকর্ড ভাঙুক কী না-ভাঙুক, স্টেফির চেয়ে বড় প্লেয়ার সেরেনা। সার্ভিস, রিটার্ন, ফোরহ্যান্ড-ব্যাকহ্যান্ড, গ্রাউন্ডস্ট্রোক, রিফ্লেক্স, কোর্ট কভারিং সব কিছুই দারুণ ভাল। বিশ্বমানের। স্টেফির শুধু ফোরহ্যান্ড ছিল। এতটাই ছিল যে, ব্যাকহ্যান্ডে আসা বল ইনসাইড-আউট হয়ে ফোরহ্যান্ড মারত। ওর সময়ে সেলেস আর কিছুটা সাবাতিনি বাদে তেমন সত্যিকারের চ্যালেঞ্জার কেউ ছিল না। তাও আবার সেলেস ফর্মের মধ্যগগনে ছুরিকাহত হয়ে খেলার ধার অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিল। সেরেনা কিন্তু দু’দশক ধরে বিশ্ব টেনিসে রাজ করে চলেছে। এটা নিয়ে চারবার যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতল। প্রথম বার ফ্লাশিং মেডোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় আজারেঙ্কা দশ বছরের বালিকা। এখন আজারেঙ্কা ছাড়াও শারাপোভা, রাডওয়ানস্কা, কিভিতোভো, না লি, কের্বার অনেক বেশি চ্যালেঞ্জার। কিন্তু সবাই খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে সেরেনার অবিশ্বাস্য পাওয়ারের সামনে। এ বছর উইম্বলডন জেতার পথে ১০২টি ‘এস’ সার্ভ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে করেছে ৬৩টা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শারাপোভার চেয়ে ২৬ বেশি। দুটো সংখ্যার তফাতেই শারাপোভাদের সঙ্গে সেরেনার পাওয়ারের পার্থক্যটা ধরা পড়ে। মেয়েদের টেনিসকে অভূতপূর্ব শক্তির জোরে সেরেনা পরের লেভেলে তুলে দিয়েছে। |
চ্যাম্পিয়নের সামনে |
• মার্গারেট কোর্ট ২৪
• স্টেফি গ্রাফ ২২
• হেলেন মুডি ১৯
• ক্রিস এভার্ট ১৮
• মার্টিনা নাভ্রাতিলোভো ১৮ |
(মার্গারেট কোর্টের ২৪-এর মধ্যে ওপেন যুগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় ১১টি) |
|
ফাইনালে সেরেনার প্রতিদ্বন্দ্বী আজারেঙ্কাই আমার মতে ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন। রবিবারের আগে শেষ ১২টা তিন সেটের ম্যাচে অপরাজিত ছিল। কিন্তু প্রথম হারল ন’বছরের সিনিয়রের কাছে। এতেই প্রমাণিত সেরেনার স্ট্যামিনা, পাওয়ার, স্কিল। আরও প্রশংসনীয় এই কারণে যে, এক বছর আগেও সেরেনা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। গোড়ালিতে দীর্ঘমেয়াদি চোট ছাড়াও ফুসফুসে সংক্রমণ রোগে জীবন সংশয়েরই জোগাড় ঘটেছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এ বছর উইম্বলডন, অলিম্পিক, যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন। তিন মাসে তিনটে। অথচ তার আগেই ফরাসি ওপেনে সেরেনা ওর গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ারের নিকৃষ্ট পারফরম্যান্স করেছিল প্রথম রাউন্ডে হেরে। ভীষণ ভেঙে পড়েছিল। বছর তিনেক আগে অস্ট্রেলীয় ওপেন জেতার প্রাক্কালেও হোবার্ট ওপেনে প্রথম রাউন্ডে হেরে ওই অবস্থা হয়েছিল ওর। সারারাত দিশেহারা ড্রাইভ করেছিল গোটা শহরে। আসলে যে কোনও বিশ্রী হার সেরেনাকে আরও মোটিভেটেড করে তোলে। একবার নয়, অনেকবার সেটা দেখা গিয়েছে। চোটের জন্য সব মিলিয়ে দশটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে পারেনি। নইলে আরও গোটা চার-পাঁচ বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব সেরেনার পকেটে থাকত। স্টেফির রেকর্ডকেও তা হলে এতটা নিরাপদ দেখাত না!
|
ফাইনালের আগে একসঙ্গে ফুটবলে
সংবাদসংস্থা • নিউ ইয়র্ক |
অ্যান্ডি মারে বনাম নোভাক জকোভিচ। স্কট বনাম সার্ব লড়াই যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে পুরুষ ফাইনালে। আর ঠিক তার আগের সন্ধেয় যুযুধান দুই ফাইনালিস্ট পাশপাশি বসে টিভিতে দেখলেন নিজেদের দেশের ফুটবল লড়াই। ২০১৪ বিশ্বকাপের ইউরোপীয় কোয়ালিফাইং রাউন্ডে স্কটল্যান্ড বনাম সার্বিয়ার ম্যাচ ছিল গত কাল। গোলশূন্য সেই ম্যাচ মারে আর জকোভিচ একসঙ্গে বসে টিভিতে দেখেন। যা নিয়ে জকোভিচ পরে বলেছেন, “অ্যান্ডির সঙ্গে বসেই ম্যাচটা দেখেছি। দু’জনে একটাই কম্পিউটার নিয়ে বসে তাতেই পুরো খেলাটা দেখলাম। দু’জনের মেজাজই ঠান্ডা ছিল। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে আমরা দু’জনেই যথেষ্ট উত্তেজিত ছিলাম নিজেদের দেশের জয় প্রত্যাশা করে। আমি তো মনে মনে অনেক চিৎকার করেছি। অ্যান্ডিও নিশ্চয়ই চুপ ছিল না মনে মনে।” |