গণধর্ষণ, সরব দুই শহরই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
একটা ঘটনা। তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সকলেই। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, দুই শহরে মিছিল হয়েছে। খড়্গপুর টাউন থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের আশ্বাস, তল্লাশি চলছে। শহরের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।
পুলিশের আশ্বাসে অবশ্য এখনই উদ্বেগ কাটছে না খড়্গপুরবাসীর। শনিবার রাতে খড়্গপুরের মথুরাকাটিতে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মেয়েটি এখন রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার তদন্তে রবিবার খড়্গপুরে এসেছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ। ৭ যুবক এই ঘটনায় যুক্ত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে কৌশিক দাস ও প্রতীক দেব নামে দু’জন গ্রেফতারও হয়েছে। |
 |
এসএফআইয়ের ধিক্কার মিছিল শহরে। |
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়। খড়্গপুর শহরের মালঞ্চয় সভা করে ডিএসও। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মণিশঙ্কর পট্টনায়েক, কুমারেশ দে প্রমুখ। ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক সকলকে প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান নেতৃত্ব। কুমারেশ বলেন, “এই অবস্থায় আবার নবম শ্রেণি থেকে যৌন শিক্ষা চালু করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে যে নোংরা কাজ চলছে, তা অবলীলায় চলতে থাকবে।” প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠনও। ডিওয়াইএফ-এসএফআইয়ের উদ্যোগে এ দিন খড়্গপুর টাউন থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। নেতৃত্বে ছিলেন যুব নেতা কামরুজ্জামান, ছাত্র নেতা রাজীব মণ্ডল প্রমুখ। রাজীব বলেন, “শহরের বুকে এ ধরনের ঘটনা ভাবা যায় না। এমন ঘটনা এড়াতে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে।” রবিবার খড়্গপুর টাউন থানায় ডেপুটেশন দিয়েছিল সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের খড়্গপুর শাখা। ছিলেন সুনীতা গুপ্ত, জয়শ্রী চক্রবর্তী, মালা মজুমদার, অঞ্জলি পণ্ডিত, মৌসুমী বেরা। সংগঠনের তরফে দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। |
 |
খড়্গপুর থানার সামনে ডিওয়াইএফের বিক্ষোভ। |
সোমবার মেদিনীপুর শহরেও প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। বিকেলে শহরের কলেজ মোড় থেকে ছাত্র- যুবদের মিছিল বেরোয়। নেতৃত্বে ছিলেন যুব নেতা কুন্দন গোপ, ছাত্র নেতা অসিত লৌহ প্রমুখ। এমন ঘটনা বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকারকেই দুষছেন নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, সরকার যে পদক্ষেপ করছে বা বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে দুষ্কৃতী দল আরও ‘উৎসাহিত’ হচ্ছে। জোট সরকারের শরিক কংগ্রেসও ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে। সোমবার বিকেলে খড়্গপুরের শহরের মথুরাকাটি থেকে দলীয় কর্মী- সমর্থকেরা মিছিল করে টাউন থানায় আসেন। থানার সামনে বিক্ষোভ- কর্মসূচী হয়। পরে দলের এক প্রতিনিধি দল ডেপুটেশন দেন। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন। শহরের বুকে এমন ঘটনা কবে হয়েছে, মনে পড়ছে না। আমরা পুলিশকে বলেছি, দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন। না- হলে আন্দোলন হবে।” পুলিশকে ‘চাপে’ রাখতেই কংগ্রেসের এই আন্দোলনে নামার হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
|
ধৃতদের জেল হেফাজত |
খড়্গপুর শহরে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ধৃত কৌশিক দাস ও প্রতীক দেব’কে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল মেদিনীপুর আদালত। সোমবার দুপুরে এদের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সিজেএম কল্লোল দাস ধৃতদের আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শনিবার সন্ধ্যায় বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার পথে কয়েকজন যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। রাতেই তার বাবা পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানান। সোমবার দুপুরে ধৃত দুই যুবককে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে ধৃতদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করা হয়নি। ২৪ সেপ্টেম্বর ধৃতদের ফের মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হবে। |
|
একটা সময় রেলশহর খড়্গপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে দাপিয়ে বেরিয়েছে দুষ্কৃতী দল, মূলত রেল-মাফিয়ারা। পথেঘাটে বেরনোর আগে ‘সন্ত্রস্ত’ হয়েছেন মানুষজন। ক্রমে পরিস্থিতি পাল্টায়। তবে এখনও শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই চুরি- ছিনতাই হয়। তবে কয়েক মাস ধরে দুষ্কৃতীদের ‘দাপট’ ফের বাড়ছে বলেই অভিযোগ। ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরে নানা ভাষাভাষি মানুষের বাস। তার উপর এটি রেলশহর। ফলে এখানে পরিবেশ-পরিস্থিতি অন্য শহরের তুলনায় একটু আলাদা। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আবার আগের মতো হতে পারে। অন্তত শহরবাসীর আশঙ্কা এমনই। সর্বস্তরের এই প্রতিবাদ পুলিশকে আরও কতটা ‘তৎপর’ করতে পারে, সেটাই এখন দেখার।
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ ও সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
|