বৃষ্টিতে স্বস্তি আমন চাষে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় ভারি বৃষ্টি হাসি ফুটিয়েছে হাওড়া জেলার আমন চাষিদের। চলতি বছরে আমন মরসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টির অভাব ছিল। কোনওমতে চারা রোপন করে দিলেও জলের অভাবে সেগুলি পুষ্ট হচ্ছিল না। ফলে জেলা জুড়ে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছিল। অনেক জমিতে চারা হলুদ হয়ে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি ঘুরেছে দিয়েছে সাম্প্রতিক বৃষ্টির ফলে। ভাল ফসল তোলার আশা করছেন তাঁরা।
উলুবেড়িয়া এবং হাওড়া সদর, জেলার দু’টি মহকুমার ১৪টি ব্লকে প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল জেলা কৃষি দফতর। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না-হওয়ায় চারা রোপণ করতে গিয়ে চাষিরা বেশ সমস্যায় পড়েন। হুগলি নদীর জোয়ারের জল এবং পুকুরের জল পাম্প করে তুলে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত জমিতে চাষিরা চারা রোপণ করতে পেরেছিলেন বলে জেলা কৃষি দফতরের দাবি। |
উলুবেড়িয়া মহকুমার ৯টি ব্লকে সব থেকে বেশি আমন ধানের চাষ হয়। চলতি বছরে এই মহকুমায় কৃষি দফতর ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। অন্য দিকে, হাওড়া সদর মহকুমার ৫টি ব্লকে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। উলুবেড়িয়া মহকুমার ৯টি ব্লকে প্রায় ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে বলে মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রের খবর। লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চারা রোপণ করা হয়েছে সদর মহকুমার ৫টি ব্লকেও।
আমন চাষে বড় সহায় হল বৃষ্টির জল। সেই কারণে শুখা মরসুমে কৃত্রিম উপায়ে জল তুলে চাষ করার জন্য যে সব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলি আমন চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এ বছরে ধানের চারা রোপণ করার পরেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না-হওয়ায় অনেক জায়গায় আরএলআই পাম্পও চালানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এমন অবস্থা দাঁড়ায়, যে এতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এক দিকে চাষিরা জলের জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে হাপিত্যেস করে বসে থাকছিলেন। অন্য দিকে, জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির মোকাবিলায় কী করণীয় সে বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
প্রথম দফায় আমন ধানের যে সব চারা রোপণ করা হয়েছে তা থেকে ফসল ওঠার কথা অক্টোবরের মাসের প্রথম দিকে। সেই কারণে ওই সময় থেকে জেলা খাদ্য দফতর চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছে। জেলার চাষিদের বক্তব্য, ধান উৎপাদন হলে তবেই তো বিক্রির প্রশ্ন। কয়েক দিনের বৃষ্টি অবশ্য চাষিদের সেই দুশ্চিন্তা দূর করেছে।
আমতার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল মাথায় বৃষ্টি নিয়ে চাষিরা ধানের গোড়ায় নিড়ান দিতে ব্যস্ত। চারার গোড়ায় ভাল জল জমেছে। রঙ ফিরেছে। ঘন সবুজ। অথচ কয়েকদিন আগেও চারা রঙ ছিল হলুদ।
সেই দৃশ্য দেখিয়ে আমতা ১ ব্লকের উদং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তরুণ ধাওয়া বললেন, “আমি নিজে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। পুকুর থেকে জল পাম্প করে তুলে কোনওমতে চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সামাল দিতে পারছিলাম না। জলের অভাবে চারাগুলি হলুদ হয়ে গিয়েছিল। গোড়ার মাটি ফেটে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক উপকার হল। আশা করি ভালই ফলন হবে।” জেলা কৃষি দফতরও একই দাবি করেছে।
|