অভিযোগ মানছেন না শ্রমিকরা
‘অসন্তোষে’ বন্ধ হল ডানকুনির বিস্কুট কারখানা
প্রায় এক সপ্তাহ হল কাজ বন্ধ ডানকুনির ভগবতী বিস্কুট কারখানায়।
ইউনিয়নের জুলুম-তোলাবাজি আর শ্রমিক অসন্তোষের অভিযোগ তুলে গত ৩ সেপ্টেম্বর কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন সংস্থার মালিক বিনোদ কুমার অগ্রবাল। রাজ্যের শ্রম দফতরকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিক ইচ্ছাকৃত ভাবে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন।
ঘটনা জেনে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। কারখানা ফের চালু করতে ১৮ সেপ্টেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে হুগলি জেলা প্রশাসন। শ্রম কমিশনারের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, কারখানার তিনটি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওই ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিসকে ‘বেআইনি’ দাবি করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার ভিত্তিতেই ডাকা হয়েছে বৈঠক।
দিল্লি রোডের ধারে, মোহন বেকার্স প্রাইভেট লিমিটেডের এই কারখানাটি চলছে গত বছর দশেক। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে সাড়ে চারশোরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। এখানকার তৈরি বিস্কুট রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য রাজ্যেও যায়। কিন্তু সম্প্রতি ইউনিয়নের জুলুম আর শ্রমিক অসন্তোষ অসহনীয় মাত্রা নিয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। বিনোদবাবুর কথায়, “শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মহলে বহু বার চিঠি দিয়েছি। তাতে কেউ কান দেয়নি। বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধের নোটিস দিয়েছি।”
কারখানাটিতে তিনটি স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। আইএনটিটিইউসি, সিটু এবং নকশালপন্থীদের আইএফটিইউ। কারখানা সূত্রের খবর, চলতি বছরে ঈদের আগে সব শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের চাপে কর্তৃপক্ষ বেতন বাড়ান। সেই সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর কথাও বলেন তাঁরা। কাজে ‘গতি আনতে’ প্যাকেজিং বিভাগের ১৬ জন কর্মীকে বদলি করে তাঁদের জায়গায় নতুন কর্মী আনা হয়। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বদলি ঘিরে অসন্তোষের জেরে উৎপাদন কম করতে শুরু করেন শ্রমিকেরা। সমস্যা দেখা যায় বিস্কুট খুচরো প্যাকেট (লুজ প্যাকেজিং) করার ক্ষেত্রেও। কারখানা থেকে সরবরাহ করা বেশ কিছু মাল ফেরতও আসে। ইউনিয়নগুলির পাল্টা বক্তব্য, প্যাকেজিং বিভাগে নতুন অদক্ষ শ্রমিকদের আনার ফলেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার দায় শ্রমিকদের উপরে চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। কারখানার আইএনটিটিইউসি নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে কোনও গণ্ডগোল নেই। মূল গণ্ডগোলটা মালিক পক্ষের তরফে।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “শ্রমিকদের মধ্যে কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই এ কথা বলব না। কিন্তু তা তো সব কারখানাতেই আছে।” ঘটনা হল, ওই কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র তিনটি গোষ্ঠী রয়েছে। প্রদীপবাবুর গোষ্ঠী ছাড়াও, হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব এবং চণ্ডীতলার তৃণমূল বিধায়ক স্বাতী খোন্দকারেরও গোষ্ঠী রয়েছে। তবে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে ওই তিন গোষ্ঠীর একই সুর। প্রায় একই বক্তব্য সিটু-র জেলা সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় এবং আইএফটিইউ নেতৃত্বেরও।
শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য, তাঁদের চাপের কারণে শ্রমিকদের বেতন মাথাপিছু কমপক্ষে ১৮০০ টাকা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এখন পুজোর মুখে কৌশলে ঝামেলা পাকিয়ে বোনাস দেওয়ার দায় এড়াতে চাইছেন। ইউনিয়নগুলির বিরুদ্ধে তোলাবাজি এবং জুলুমের যে অভিযোগ মালিকপক্ষ এনেছে, তা-ও মানতে নারাজ শ্রমিক নেতারা। শ্রমিক সংগঠনগুলির তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কারখানার মালিক বিনোদ অগ্রবাল বলেন, “যা জানানোর, সরকারি দফতরকে জানিয়েছি। এখন সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেই অপেক্ষায় আছি। পুরো বিষয়টাই মালিকপক্ষ এবং সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।”
কয়েক দিন আগেই রাজনৈতিক ‘জুলুমে’র অভিযোগে হুগলির ধনেখালির একটি বিয়ার কারখানা তাদের একটি প্রস্তাবিত ইউনিট বিহারে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অভিযোগের তির মূলত ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত বদল করে ডেনমার্কের ওই সংস্থা। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ভগবতী কারখানার এই ঘটনা। যা শুনে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর প্রতিক্রিয়া, “সরকারের নীতি অনুযায়ী আমরা একটি কারখানায় একটিই ইউনিয়ন চাই। ওই কারখানার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করব।” পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “ডানকুনি এলাকার বেশির ভাগ বিস্কুট কারখানাই শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো মানে না।”
হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “ওই কারখানায় কী পরিস্থিতি হয়েছে তা জানতে শ্রম কমিশনারের দফতর থেকে স্টেটাস রিপোর্ট চেয়েছি। সেই রিপোর্ট হাতে এলেই জেলা প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.