মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী লড়াই চূড়ান্ত পর্বে পা রাখিল। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের পার্টি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হইবার পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থি-ত্বে ভূষিত হইলেন। শুরু হইল ‘ফল ক্যাম্পেন’, অর্থাৎ ৬ নভেম্বরের সেই চূড়ান্ত দিনটির আগে নির্বাচনী প্রচারের শেষতম ধাপ। স্বভাবতই নূতন করিয়া মতসমীক্ষার ঢেউ উঠিয়াছে, প্রতি বারই পার্টি কনভেনশনের পর যেমন ডেমোক্র্যাট রিপাবলিকান দুই দিকেই দ্বিধান্বিত সমর্থকদের অবস্থানের পরিবর্তন হইয়া থাকে, এবং ফলত দুই দলের মধ্যেই প্রার্থীর পিছনে সমর্থনের পরিমাণে বৃদ্ধি (কিংবা হ্রাস, কিছু দুর্লভ ক্ষেত্রে) লক্ষিত হয়, এ বারও তেমন হইয়াছে। দেখা যাইতেছে, ওবামার পক্ষে সমর্থন যতখানি বাড়িয়াছে, রমনির পক্ষে কিন্তু ততখানি বাড়ে নাই। একটি বিষয় এই কনভেনশন-দ্বয়ের পর যথেষ্ট স্পষ্ট: রমনি এই নির্বাচন লড়িতেছেন সম্পূর্ণ নেতি-নীতি অনুসরণ করিয়া প্রেসিডেন্ট হইলে তিনি কী করিবেন সে বিষয়ে আলোকপাত না করিয়া তাঁহার ভাবজগৎ জুড়িয়া আছে ওবামা কী ভুল করিয়াছেন এবং ওবামার বিরুদ্ধে জিতিয়া আসিলে তিনি কী কী করিবেন না, সেই নির্দেশিকা। প্রাথমিক ভাবে কিছু উত্তেজক হইলেও এই ধরনের নেতি-নির্দেশিকা কিন্তু নির্বাচন-যাত্রায় শেষ অবধি সংকটজনক হইতে পারে। এখনও সময় বাকি। এই শেষ প্রহরে যদি অন্তত সেই সংকট বুঝিয়া রমনি খানিকটা সদর্থক আলোচনায় ব্যাপৃত হন, যদি জানাইতে পারেন তাঁহার ভবিষ্যদর্শন কী ও কেন, নিশ্চিত ভাবে তাঁহার সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িবে।
অপর পক্ষে, প্রেসিডেন্ট ওবামার দর্শনেও সমস্যা রহিয়াছে। রমনির সঙ্গে তুলনা করিলে তাঁহার নির্বাচনী বার্তা নেতির বার্তা নহে, বরং যথেষ্ট সদর্থক, ভবিষ্যমুখী। তাঁহার সমস্যা অন্যত্র। প্রথম হইতেই খুব উঁচু তারে তিনি নির্বাচনী প্রতিযোগিতার সুরটি বাঁধিবার চেষ্টা করিতেছেন, দুই বিশ্বদর্শনের লড়াই, দুই ভবিষ্য-ছবির লড়াই, আমেরিকার দুই সম্ভাবনার লড়াই ইত্যাদি বলিয়া। কোথায় কোথায় সেই লড়াই-এর ক্ষেত্র প্রস্তুত, তাহাও বলিতে বাকি রাখেন নাই। যেমন, অর্থনীতি। কিংবা, সামাজিক সংস্কার। কিন্তু ইহার পরই সমস্যা। অর্থনীতি কিংবা সংস্কার বিষয়ে তাঁহার আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে কিন্তু দু’-চারিটি ভাসা-ভাসা প্রতিশ্রুতি ভিন্ন তিনি তেমন কিছু বলিতে সক্ষম হন নাই। এ দিকে বর্তমানের বাস্তব পরিস্থিতি সেই সকল প্রতিশ্রুতির দিকে সমানেই প্রশ্নচিহ্ন ছুড়িয়া দিতেছে। গত অগস্ট মাসে যদি মাত্র ৯৬০০০ চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়, তবে পরবর্তী চার বছরে কী উপায়ে মার্কিন অর্থনীতিকে নূতন কর্মসংস্থানের সমুদ্রে ভাসাইয়া দেওয়া সম্ভব, তাহা খোলসা করিয়া বলিতেছেন না। সুতরাং সংশয় জাগা স্বাভাবিক যে, তাঁহার নিজেরও বিষয়টি তত খোলসা করিয়া ভাবা নাই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাতান্নতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এই ভাবেই তাহার চূড়ান্ত দিনটির দিকে অগ্রসর হইতেছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখিয়াই মনে হইতেছে যেন তাঁহারা আস্তিনে লুকাইয়া রাখা মূল তাসগুলি এখনও বাহির করেন নাই। অথচ এমনও সম্ভব যে, তাঁহাদের আস্তিনে হয়তো তাসগুলি আদৌ নাই-ই! দ্বিতীয় সম্ভাবনাই যদি সত্য প্রমাণিত হয়, সে ক্ষেত্রে, পার্টি কনভেনশন-পরবর্তী উন্মাদনা যেমনই হউক না কেন, আগামী নির্বাচন নিশ্চিত ভাবে কঠিন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হইতে চলিয়াছে, যে সব প্রদেশগুলি এখনও স্পষ্টত মনস্থির করে নাই, সেই সকল ‘সুইং স্টেট’-গুলির কাছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই সমান অনির্ভরযোগ্য ঠেকিতে চলিয়াছেন, এইটুকু বলাই যায়। বাকিটা স্থির করিয়া দিবে সংখ্যাতত্ত্বের জাদু, রাজনীতি-দর্শনের মহিমা নহে। |