ব্যঙ্গচিত্র শিল্পী অসীম ত্রিবেদীকে গ্রেফতার করে কার্যত মুখ পুড়ল মুম্বই পুলিশের। রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে ধৃত অসীমকে আজ নিজেদের হেফাজত থেকে রেহাই দিতে চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু, তাদের বিড়ম্বনায় ফেলে জামিন নিতেও উদ্যোগী হননি অসীম। ফলে, জেলেই থাকবেন তিনি।
ব্যঙ্গচিত্রে সংসদ ও জাতীয় প্রতীককে অসম্মান করার দায়ে অসীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সদস্য অমিত কাটারনিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি আইন ও জাতীয় প্রতীক আইনে অভিযোগ এনেছে মুম্বই পুলিশ।
ইতিমধ্যেই অসীমের সমর্থনে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিবির। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু সাফ জানিয়েছেন, অসীমের গ্রেফতারিই আইন-বিরুদ্ধ কাজ। তোপ দেগেছে বিজেপি ও সিপিএমও। বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, ইউপিএ সরকার দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। |
আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃত অসীম ত্রিবেদীকে। ছবি: পিটিআই |
অথচ বাকস্বাধীনতার উপরে হামলা চালাচ্ছে। সম্প্রতি একটি মার্কিন সংবাদপত্রে মনমোহন সিংহের সমালোচনা করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন শাহনওয়াজ।
আদতে কানপুরের কাছে
উন্নাও এলাকার বাসিন্দা অসীম। আজ কানপুরের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের
বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান অসীমের বাবা অশোক এবং
স্থানীয় বাসিন্দারা। অশোকের বক্তব্য, অসীম দেশ-বিরোধী কাজ করতেই পারেন না। তাঁর দাদু রেবা শঙ্কর ত্রিবেদী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। অশোকের দাবি, অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়াতেই অসীমকে হেনস্থা করা হচ্ছে। মুম্বইয়ে অণ্ণার সভায় যোগ দিয়েছিলেন অসীম। সেখানে তাঁর ব্যঙ্গচিত্রও প্রদর্শন করা হয়েছিল। অসীমের মুক্তি চেয়েছে অণ্ণা-সমর্থক ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন’ সংগঠনও।
শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল কানপুরের বাড়িতেই ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনে মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যদি অসীমকে সাহায্য করার প্রয়োজন হয় তবে তাঁকে নিশ্চয়ই সাহায্য করা হবে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অম্বিকা সোনির বক্তব্য, ইউপিএ সরকার নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে চায় না। তবে জাতীয় প্রতীককে সম্মান করা উচিত।
অসীমের সমর্থন বাড়তে থাকায় নড়েচড়ে বসে মহারাষ্ট্র সরকার। পুলিশের অবস্থান থেকে নিজেদের দূরত্ব রাখতে ব্যস্ত হয়ে উঠে রাজ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিল জানিয়ে দেন, অসীমকে পুলিশ হেফাজতে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ, এই বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। গত কাল অসীমকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত। আজ পুলিশ আদালতে জানায়, অসীমকে আর হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই। ফলে, তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠায় আদালত। অসীম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে না নিলে তিনি জামিনের আর্জি জানাবেন না। ফলে, আপাতত জেলেই থাকবেন তিনি। অসীমের এই সিদ্ধান্তে আরও বেকায়দায় পড়ল মহারাষ্ট্র সরকার তথা মুম্বই পুলিশ। |