নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
খারাপ রাস্তায় বাস চালাতে গিয়ে প্রায় প্রতি দিনই যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লাভের টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে বাসের রক্ষণাবেক্ষণেই। এমনই অভিযোগে আসানসোল মহকুমায় ৬৫টি বাস বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। রাস্তার হাল ফিরলে আবার বাস চালানো শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বাসমালিকদের অভিযোগ, বরাকর থেকে চুরুলিয়া, রানিগঞ্জ থেকে পাণ্ডবেশ্বর, আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, হরিপুর, রুনাকুরাঘাট পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। পরিবহণ কর্মীদের বক্তব্য, খানা-খন্দে ভরা ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। যাত্রীদেরও কোনও নিরাপত্তা নেই। ফলে মাঝেমধ্যেই রোষের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল-বরাকর রুটের কুমারপুর রেল ক্রসিং, লছিপুর, কুলটির কলেজ রো এলাকা, হনুমানচড়াই, বরাকর ও নিয়ামতপুরের রাস্তার বিপজ্জনক দশা। আসানসোল-চিত্তরঞ্জন রুটের দেন্দুয়া মোড়, রূপনারায়ণপুর নিউমার্কেট, দেন্দুয়া কাচ কারখানা থেকে বনজেমারি রাস্তায় হেঁটে যাওয়াও উঠেছে। আসানসোল মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রুটে বন্ধ ১২টিরও বেশি বাস।
আসানসোল থেকে ভায়া দোমহানি, চুরুলিয়া রুটে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক, ভানোড়া মোড় থেকে দোমহানি বাজার যাওয়ার রাস্তারও একই অবস্থা। চুরুলিয়া থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার রাস্তায় তালতোড় মোড় অবধি বেহাল। দোমহানি বাজার থেকে ভানোড়া, বেলডাঙা, হনুমানচড়াই, বারাবনি রেলগেট যাওয়ার রাস্তাও বেশ খারাপ। দোমহানি বাজার থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার রাস্তারও একই হাল। শ্রীপুর, জামুড়িয়া-হরিপুরের রাস্তা, জামুড়িয়া সিনেমা হল থেকে পুরভবন ও শেখপুর ইকড়া এলাকায় উঠে গিয়েছে রাস্তার পিচও। মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়, এর জেরে আসানসোল থেকে দোমহানি, জামুড়িয়া ও হরিপুর রুটে বন্ধ ৮টি বাস। আসানসোলের ভগৎ সিংহ মোড় থেকে গৌরান্ডির রুনাকুড়া ঘাট রুটে নিবেদিতা বাস টার্মিনাস থেকে পাঁচগাছিয়া রেলগেট ও নুনি থেকে লালগড় পর্যন্ত রাস্তা খানা-খন্দে ভরা। তার জেরে ওই রুটে বন্ধ দু’টি বাস। পাশাপাশি, ভগৎ সিংহ মোড় থেকে গৌরান্ডির রুনাকুড়া ঘাট রুটে কাঁখোয়া হয়ে যাওয়ার রাস্তাতেও বন্ধ রয়েছে একটি বাস।
আসানসোল-গৌরান্ডি রুটে বাতাসপুর মোড়, গৌরাঙ্গি কোলিয়ারি, পাঁচকুলিয়ার রাস্তা খানা-খন্দে ভর্তি। আসানসোল-গাইঘাটা রুটে অন্ডালের হরিপুর গাইঘাটা মোড় থেকে উখড়া যাওয়ার পথে প্রায় অর্ধেক রাস্তা, হরিপুর কোলিয়ারি মোড়, উখড়ার বাজপেয়ী মোড়ের কিছু দূরের রাস্তায় রয়েছে অজস্র ছোট-বড় গর্ত। রানিগঞ্জের প্রধান রাস্তা নেতাজি সুভাষ রোডের কিছু জায়গায় যেমন ফাটল ধরতে শুরু করেছে, তেমনই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পাণ্ডবেশ্বর ও গৌরবাজারের রাস্তা। অন্য দিকে, আসানসোলের শশীভূষণ গড়াই রোডের লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে রাস্তা ভাঙতে শুরু করেছে।
মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, রানিগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে বন্ধ রয়েছে প্রায় ২০টি বাস। আসানসোল থেকে বিভিন্ন রুটে ৩৯টি বাস চালাচ্ছেন না মালিকরা। তার মধ্যে আসানসোল থেকে মাইথন, সূর্যনগর, জে কে নগর, রেকিট অ্যান্ড কোলমেন, এথোড়া, ডিসেরগড়, সামডিহি রুটের বেশ কিছু বাসও বন্ধ। রানিগঞ্জ থেকে পাণ্ডবেশ্বর রুটের ৪টি বাস বন্ধ। এ ছাড়া নিউটাউন থেকে শ্রীপুর, আসানসোল থেকে রিভারসাইড, পাটমোহনা, কোয়ারডি, ঝাঁঝরা, চিনাকুড়ি রুটে একটি করে বাস বন্ধ।
বারাবনির যুব তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আসানসোল থেকে আমুলিয়া রুটের এক মাত্র বাসটিও বন্ধ করে দিয়ে তা অন্য রুটে চালানো হচ্ছে। অথচ সেটিই ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা। ফলে সমস্যায় পড়েছেন অনেক যাত্রী। তিনি জানান, দিন পনেরো আগে আসানসোলের মহকুমাশাসককে সমস্যা সমাধানের জন্য একটি দাবিপত্র দিয়েছেন তাঁরা।
মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া জানান, রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে অতিরিক্ত জেলাশাসকের পৌরোহিত্য পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পূর্ত দফতর বর্ষায় স্থায়ী সংস্কারের কাজ করবে না বলে জানিয়েছে। তবে আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। |