স্বামীকে আটকে তরুণীকে ‘গণধর্ষণ’ দুর্গাপুরে
ড়্গপুরের পরে এ বার দুর্গাপুরেও ‘গণধর্ষণে’র শিকার হলেন এক তরুণী। যদিও তার পরে সারা দিন কেটে গেলেও, সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।
গত ৩০ অগস্ট দুর্গাপুরেরই ফুলঝোড়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এ বার ঘটনাস্থল সিটি সেন্টার এলাকায় পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে। রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখানেই আসানসোল থেকে আসা এক তরুণীর স্বামীকে আটকে রেখে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সিটি সেন্টার ফাঁড়ি থেকে মাত্র কিলোমিটার খানেকের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কোনও টহলদার ভ্যানের দেখা মেলেনি।
ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে তরুণীর প্যান্ট।
কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে সিপিএম। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে যা রিপোর্ট বেরিয়েছে, তাতে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ৮৯। সংবাদমাধ্যমের খবরেই দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই-অগস্ট দু’মাসে ধর্ষণ ৩৭, শ্লীলতাহানি ১২।” শনিবারও খড়্গপুরে এক স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তারই সঙ্গে বারুইপুর, বহরমপুরের ‘ধর্ষণে’র প্রসঙ্গ টেনে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে পার্ক স্ট্রিট ও কাটোয়ার ঘটনার পরেও সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। নতুন প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। খুবই সস্তা হয়ে গিয়েছে মান-ইজ্জতের দাম!”
রবিবার দুর্গাপুরের যেখানে ঘটনাটি ঘটে, সেই এলাকা এমনিতে জনবিরল। দুষ্কৃতীদের আনাগোনার কথাও পুলিশের অজানা নয়। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি আসানসোলের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের অংশীদার। অন্য অংশীদার ষাটোর্ধ্ব এক চিকিৎসক। মাস দুয়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। স্বামী হুগলির তারকেশ্বরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। তাঁর স্বামী জানান, কর্মী নিয়োগ নিয়ে সমস্যার জেরে ডায়গনস্টিক সেন্টারটি বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল। গত শনিবার সেটি ফের খোলে। কাজের চাপে তিনি সেই অনুষ্ঠানে যেতে না পারায় স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। তার জেরে সেই রাতে তরুণী আসানসোলেই তাঁর অন্য একটি বাড়িতে থেকে যান। রবিবার রাতে তিনি ডাক্তারবাবুর গাড়িতে ফিরছেন খবর পেয়ে তিনি মোটরবাইক নিয়ে স্ত্রীকে আনতে যান। কিন্তু দেখা হতেই দু’জনে ফের ঝগড়া হয়। ইতিমধ্যে ডাক্তারবাবু গাড়ি নিয়ে ফিরে যান।
দুর্গাপুরের পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে গণধর্ষণের তদন্তে পুলিশ।
পিয়ালা কালীবাড়ি থেকে তরুণীর বাড়ি ৭-৮ কিলোমিটার দূরে বিধাননগরে। তাঁর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, তর্কাতর্কির পরে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়ার আগে তাঁর স্ত্রী রাস্তার পাশে গাছের পিছনে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়ে কাছেই জঙ্গলের দিক থেকে মোটরবাইকে তিন যুবককে আসতে দেখেন তিনি। তাঁর স্ত্রীকে দেখতে পেয়েই তারা কাউকে মোবাইলে ফোন করতে থাকে। বিপদ বুঝে তিনি নিজের মোবাইল থেকে ভাইকে ফোন করেন। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার উল্টো দিক থেকে আট-দশ জন এসে তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাঁর কথায়, “বাধা দিতে গেলে ওরা আমায় মারধর করে। চিৎকার করলে মেরে ফেলার ভয় দেখায়।” এই সুযোগে দু’জন তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তাঁদের মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়।
দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে তরুণীর স্বামী রাস্তার পাশে নেমে স্ত্রীকে খুঁজে বের করেন। অন্ধকারে তরুণীর জিন্সের প্যান্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি (এ দিন সকালে পুলিশ গিয়ে তা গাছে আটকে থাকতে দেখে)। তাঁর স্বামীর ট্রাউজার্সের নীচে বারমুডা ছিল। নিজের ট্রাউজার্স স্ত্রীকে পরিয়ে বাইকে চাপিয়ে তিনি কাছাকাছি একটি এটিএম-এ যান। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীর থেকে ফোন নিয়ে পুলিশে খবর দেন।
ইতিমধ্যে তাঁর ভাইও এসে পৌঁছন। পুলিশ এসে তাঁদের ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ভোরের দিকে তরুণীকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস জানান, তাঁর শরীরে বেশ কিছু ক্ষত রয়েছে। দেহরস সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সকালে স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ। দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের দাবি, কারা এই ঘটনায় যুক্ত তা আন্দাজ করা গিয়েছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।

ছবি: বিকাশ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.