গ্রিড বিপর্যয় রুখতে সুরক্ষা
ব্যবস্থা গড়ছে রাজ্য
গ্রিডে কোনও বিপর্যয় হলে গোটা রাজ্য যাতে অন্ধকারে ডুবে না যায়, সে জন্য প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলাদা আলাদা সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে বিদ্যুৎ দফতর। উদ্দেশ্য একটাই, হঠাৎ পূর্বাঞ্চল গ্রিড বসে গেলে সব ক’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে এক সঙ্গে বিকল হয়ে না যায়। অর্থাৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ব্যান্ডেল এবং সাঁওতালডিহি যদি বসে যায়, কোলাঘাট বা বক্রেশ্বর যেন নিজেদের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারে। এতে অন্তত রাজ্যকে অন্ধকারের হাত থেকে বাঁচানো যাবে।
জুলাইয়ের ৩০ তারিখে উত্তরাঞ্চল গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় পুরো পূর্বাঞ্চল গ্রিড এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। আর পূর্বাঞ্চল গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সব ক’টি উৎপাদন কেন্দ্রে এক সঙ্গে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গোটা রাজ্য ডুবেছিল অন্ধকারে। দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ট্রেন। জল ওঠেনি। তবে সিইএসসি-র রক্ষাকবচ থাকায় তারা ঠিক সময় নিজেদের পূর্র্বাঞ্চল গ্রিড থেকে আলাদা করে নিয়েছিল। ফলে সে দিন কলকাতার মানুষদের ভোগান্তি হয়েছিল তুলনায় কম। তখনই প্রশ্ন ওঠে, সিইএসসি পারলে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কেন পারবে না?
গোটা দেশে বিদ্যুতের প্রধান পাঁচটি গ্রিড রয়েছে। পূর্বাঞ্চল গ্রিড, উত্তর-পূর্বাঞ্চল গ্রিড, উত্তরাঞ্চল গ্রিড, পশ্চিমাঞ্চল গ্রিড এবং দক্ষিণাঞ্চল গ্রিড। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চল গ্রিড ছাড়া বাকিগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ একটি গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দিলে অন্য তিনটিতে তার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়তে বাধ্য। যেমনটা হয়েছিল ৩০ জুলাই। ওই দিন পশ্চিমাঞ্চল গ্রিড ঠিক সময়ে নিজেদের মূল গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ায় বেঁচে গিয়েছিল পশ্চিম ভারত। কিন্তু পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল গ্রিড তা করতে পারেনি। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের একটি সূত্র বলেন, সিইএসসি-র মতো কোনও রক্ষাকবচ যাতে বণ্টন কোম্পানিও তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ দফতর। ওই কমিটি এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ দফতরকে রিপোর্ট দেবে। রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থা, বণ্টন সংস্থা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম এবং রাজ্যের গ্রিড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন এমন বিদ্যুৎ কর্তাদের নিয়েই ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ রাখবেন বিদ্যুৎমন্ত্রী স্বয়ং।
কী ভাবে রাজ্যকে সুরক্ষিত করার কথা ভাবছে বিদ্যুৎ দফতর? মণীশবাবু বলেন, “রাজ্যের গ্রিডে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি বা কোনও ব্যবস্থার মাধ্যমে সেগুলিকে আরও জোরদার করাই হচ্ছে এখন আমাদের লক্ষ্য।” রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা জানাচ্ছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে সম্পূর্ণ ভাবে পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা করে নেওয়া যাবে না। সিইএসসি-র কায়দায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিকে ঘিরে রাজ্যের কয়েকটি অঞ্চলকে আলাদা করে নির্দিষ্ট রক্ষাকবচ তৈরি করার চেষ্টা হবে।
রাজ্যের নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রিডকে সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও এখন উদ্যোগী হয়েছে। ৩০ জুলাইয়ের ঘটনার পরেই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম ও অরুণাচলপ্রদেশকে গ্রিড বাঁচাতে আরও সুরক্ষিত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি দেন। সেই চিঠি পেয়ে রাজ্য কমিটি গড়ে গ্রিডের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করার কাজে নামল। এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, “কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রককে জানিয়েই আমরা যা পদক্ষেপ নেওয়ার নেব। কারণ কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনকে না জানিয়ে গ্রিডে কিছু করা যায় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.