|
|
|
|
পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএমে ফের ‘লক্ষ্মণ-রাজ’ |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের যাবতীয় ‘দায়’ চেপেছিল যাঁর কাঁধে, হলদিয়া পুরভোটে ‘সাফল্যে’র পরে পূর্ব মেদিনীপুরে দলের হাল ধরতে সেই লক্ষ্মণ শেঠকেই বেছে নিতে হচ্ছে সিপিএমকে!
জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জোনাল কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এবং আপাতত জামিনে মুক্ত লক্ষ্মণবাবু, অশোক গুড়িয়া, অমিয় সাহুদের হাতে। আর খাস হলদিয়ায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডা শেঠ ও তাঁদের ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রণব দাসকে। রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সাংগঠনিক এই দায়িত্ব বণ্টনের পরে তা সিপিএমের জেলা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিতও হয়েছে।
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের জেরে শুধু বিরোধীদের নিশানায় নয়, দলের অন্দরেও ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েছিলেন একদা হলদিয়া তথা পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণবাবু। ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র স্বার্থে ৬ মাস আগে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-মামলায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেই জেলা কমিটি ও সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। ভাবমূর্তির জন্য রাজ্য স্তরে যা-ই করা হোক, পূর্ব মেদিনীপুরে দল চালাতে যে লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর অনুগামীরাই ‘ভরসা’, তা জানে আলিমুদ্দিন। হলদিয়ায় পুরভোটে জয়ের পরে জেলা সিপিএমে ‘লক্ষ্মণ-রাজে’র প্রত্যাবর্তন তাই ত্বরান্বিত হয়েছে। সিপিএমের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলছেন, “লক্ষ্মণবাবু-সহ দলের একাধিক নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, এ কথা বারবারই বলেছি। এখন জামিন পেলেও শর্ত হিসাবে নিজের এলাকায় যেতে পারবেন না। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে যতটা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব, তা-ই করবেন।”
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত হয়ে প্রথমে আত্মগোপন করেছিলেন তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ। পরে মুম্বই থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় পাঁচ মাস জেল হেফাজতে থাকার পরে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান তিনি। ইতিমধ্যে জুন মাসে হলদিয়া পুরসভা নির্বাচনে রাজ্যের নব্য শাসক দলকে হারিয়ে ফের ক্ষমতায় আসেন তমালিকাদেবী। ক্রমশই দলীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়তে থাকে লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর অনুগামীদের। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে অভিযুক্ত লক্ষ্মণবাবুর দুই অনুগামী নেতা অশোক গুড়িয়া ও অমিয় সাহুও গত জুলাই মাসে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান। এর পরেই লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর অনুগামীদের ফের জেলায় ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতে ‘তৎপরতা’ শুরু হয়। আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে পূর্ব মেদিনীপুরের সাংগঠনিক কাজ দেখভাল করতেন দীপক সরকার ও দীপক দাশগুপ্ত। সম্প্রতি দীপক দাশগুপ্তের পরিবর্তে রবীন দেব দায়িত্বে এসেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের ‘বেহাল’ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাংগঠনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খেজুরি, কাঁথি ও দেশপ্রাণ জোনাল কমিটির দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লক্ষ্মণবাবুকে। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লক নিয়ে গঠিত নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটির দ্বায়িত্ব পেয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক কানু সাহু ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, মুগবেড়িয়া জোনাল কমিটির দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য অমিয়বাবু, কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, নিরঞ্জন সিহিকে। জেলার বাইরে-থাকা লক্ষ্মণবাবু, অশোকবাবু, অমিয়বাবুরা সাংগঠনিক দ্বায়িত্ব পালন করবেন কী ভাবে? দলের এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের বক্তব্য, “জেলার বাইরে থাকলেও ফোনে যোগাযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে কলকাতায় গিয়ে স্থানীয় ও জেলা নেতৃত্ব পরামর্শ নেবেন।” সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, নন্দীগ্রাম ও খেজুরি এলাকায় দলের সব কার্যালয় তালাবন্ধ। অধিকাংশ এলাকায় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের মতো পরিস্থিতিও নেই। এই অবস্থায় পুরভোটে তমালিকাদেবীর নেতৃত্বে দলের জয় সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনে প্রভাব ফেলেছে। লক্ষ্মণবাবুর অনুগামী কানুবাবুকে সরিয়ে এক সময় নতুন কাউকে জেলা সম্পাদক করার ভাবনা চলছিল দলে। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে জেলায় সেই লক্ষ্মণের বিকল্প খুঁজে পেল না সিপিএম! |
|
|
|
|
|