দূষণ বিধি শিকেয় গোটা দেশেই
পরিবেশ প্রশ্নে ডাহা ফেল রাজ্যের ৩ ইস্পাত কেন্দ্রই
শ্চিমবঙ্গ থেকে তিন জন পরীক্ষায় বসেছিল। ১০০-র মধ্যে তারা পেল ৩, ৭ আর ২৩।
সেই তিন জন এই রাজ্যের তিনটি ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (সেল) বার্নপুর আর দুর্গাপুর কারখানা আর দুর্গাপুরেরই জয় বালাজি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোন ইস্পাত কেন্দ্র কতখানি পরিবেশ বান্ধব, তারই পরীক্ষা ছিল। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রই ডাহা ফেল!
বছরে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপন্ন হয়, এ দেশে এমন কারখানার সংখ্যা ২১। তার মধ্যে ১৬টি পূর্ব ভারতে। পশ্চিমবঙ্গে তিনটি। পরিবেশের পক্ষে এই ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলি কতখানি বিপজ্জনক, তা পরীক্ষা করে দেখল দিল্লির একটি অসরকারি সংস্থা, সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)। সমীক্ষার ফল বলছে, গোটা দেশের ছবিই ভয়াবহ। পরীক্ষায় বসা ২১টি কেন্দ্র গড়ে নম্বর পেয়েছে ১০০-য় ১৯।
পরিবেশের সব চেয়ে কম ক্ষতি করে মহারাষ্ট্রের রায়গড়ের ইস্পাত ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তারাও ১০০-য় মাত্র ৪০ পেয়েছে। সব চেয়ে ক্ষতিকারক ওড়িশার ঢেঙ্কানলের ভূষণ স্টিল লিমিডেট, ১০০-য় দুই। ২১টি কেন্দ্রের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জয় বালাজি-সহ কিছু সংস্থা স্বেচ্ছায় এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেল-এর দুর্গাপুর বা বার্নপুর কেন্দ্র সেই তালিকায় নেই।
সিএসই-র নির্দেশক, পরিবেশকর্মী সুনীতা নারায়ণ বললেন, “এই ছবি থেকে একটা কথা পরিষ্কার দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কোন সংস্থা কতটা বিপজ্জনক ভাবে চলছে, সেটা মেপে দেখাই হচ্ছে না। পরিবেশ সংক্রান্ত যে নিয়ম রয়েছে, গোটা দেশই তাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। ইস্পাত শিল্প তারই বড় উদাহরণ।”
কী ভাবে এই নম্বর দেওয়া হয়েছে? সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা এবং জল, কয়লা ইত্যাদি উপাদানের ব্যবহারের উপর। অর্থাৎ, যে কেন্দ্র পরিবেশকে যত কম দূষিত করে এবং যত কম জল, কয়লা ব্যবহার করে ইস্পাত উৎপাদন করে, তার নম্বর তত বেশি। সেই সঙ্গে দেখা হয়েছে কাঁচামাল মজুত রাখার ব্যবস্থা, ইস্পাত উৎপাদনের প্রক্রিয়া এবং অন্য সুরক্ষার ব্যবস্থাও।
এই সমীক্ষা সম্পর্কে জয় বালাজি কর্তৃপক্ষের মন্তব্য, ‘পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি মেনেই আমরা কারখানা চালাচ্ছি। সমীক্ষাকারী সংস্থাটি নিজস্ব মানদণ্ডে বিচার করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা ওই সমীক্ষায় স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছিলাম। নম্বর পেয়েছি ২৩। সংস্থাটি আমাদের একটি পুরস্কারও দিয়েছে।’
সেল-এর দুর্গাপুর কেন্দ্র নিয়ে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠেছে। সেখানকার কোক আভেন থেকে দূষিত জল মিশছে স্থানীয় জলে, বায়ু দূষণের হার চড়া। সংস্থাটির কাছে গড়ে প্রতি দু’মাসে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠায়। আরও খারাপ অবস্থা বার্নপুর কেন্দ্রটির। সিএসই-র ডেপুটি ডিরেক্টর চন্দ্র ভূষণ বললেন, এই কেন্দ্রটি অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন, কারণ একটি আধুনিক ইস্পাত কারখানার ন্যূনতম যে মান হওয়া উচিত, এই কেন্দ্রটি তার বহু নীচে।
সেল কী বলছে?
সংস্থাটির মতে, বার্নপুর এবং দুর্গাপুর, দু’টি কেন্দ্রই বহু পুরনো। বার্নপুুরের ইস্কো দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টও ১৯৬০-এর দশকের গোড়ায় তৈরি। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই কেন্দ্রগুলিতে ইস্পাত উৎপাদনের কাজ চলছে। তবুও, পরিবেশ দূষণের যে গ্রাহ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া আছে, দু’টি কেন্দ্রের দূষণই তার নীচে।
সেল-এর মুখপাত্র জানান, সিএসই এমন একটি সময়ে এই অভিযোগ এনেছে, যখন সেল ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণ করছে। আর ক’মাসের মধ্যেই ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বার্নপুরে দেশের আধুনিকতম ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির কাজ আরম্ভ হবে। সেটি চালু হলে ইস্কোর বর্তমান কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। মুখপাত্রটি আরও জানান, সেল-এর আধুনিকীকরণের জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার মধ্যে ৫ হাজার কোটি খরচ হচ্ছে দূষণ প্রতিরোধের কাজে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড দেশের সব চেয়ে বেশি দূষণকারী ১৭টি শিল্পের যে তালিকা তৈরি করেছে, ইস্পাত তার মধ্যে অন্যতম। এই শিল্পে যে হেতু বিপুল পরিমাণ কয়লা ব্যবহৃত হয়, তাই বায়ু দূষণের হার উদ্বেগজনক। জামশেদপুরের উষা মার্টিন লিমিডেট প্রতি টন ইস্পাত তৈরি করতে ৪.২ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও বিপুল। ২০১০-১১ সালে ভারতে মোট ৭ কোটি টন ইস্পাত তৈরি হয়েছে। মোট বর্জ্যের পরিমাণ সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টন। তরল বর্জ্য মিশছে নদীর জলে, ফলে জল দূষণের পরিমাণও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
তার পাশাপাশি রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার। দেশের প্রায় প্রতিটি ইস্পাত কেন্দ্রের সংলগ্ন অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর এমন নেমে গিয়েছে যে, স্থানীয় মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.