অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষ এবং তার জেরে দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্য এবং মহারাষ্ট্রেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের কোন কোন এলাকায় গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বীরভূমের নাম রয়েছে। আজ রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে এ বিষয়ে অসম, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যের ডিজিদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন। অসমের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশকর্তাদের সতর্ক করে দেন তিনি। |
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, ডিজি-সম্মেলনের প্রথম দিনেই তার প্রমাণ মিলেছিল। প্রাথমিক কার্যসূচিতে না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সম্মেলনের প্রথম দিনেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আজ সম্মেলনের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তৃতাতেও বিষয়টিতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি জায়গার সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি যে আগের মতো নেই এবং ফেসবুক, ট্যুইটার বা এসএমএস-এর মাধ্যমে এ ব্যাপারে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনা যে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলতে পারে, তা-ও গোপন করেননি তিনি। মনমোহনের কথায়, “গত কয়েক মাস ধরেই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহে উত্তর-পূর্বে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠাটা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়।” তাঁর বক্তব্য, এমনিতেই উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও কেরলে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। তারই মধ্যে অসমের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। কারণ দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী অসম-সহ উত্তর পূর্বের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হয়। আতঙ্কিত মানুষরা দলে দলে নিজেদের রাজ্যে ফেরা শুরু করেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, এই মুহূর্তে দেশের স্পর্শকাতর এলাকাগুলি হল উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম ভাগ, মধ্যপ্রদেশের মালওয়া অঞ্চল, পুরনো হায়দরাবাদ, কেরলের কাসারগোঢ়, মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ ও নন্দুরবার এবং কর্নাটকের উপকূলবর্তী এলাকা। পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলা ছাড়াও রাজস্থানের মেওয়াট এবং গুজরাতের সুরাত ও বনসকান্থাতেও উত্তেজনা বাড়ছে বলে রিপোর্ট দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
রিপোর্ট বলছে, ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু চলতি বছরে হঠাৎ করেই বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে উৎসবের সময়ে। কেন্দ্র মনে করছে, একেবারে প্রথমেই কড়া পুলিশি ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে অনেক জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন, সাম্প্রতিক কালে তেমন বড় কোনও গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা রাজ্যে ঘটেনি। তবে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, অসমে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ফলে অনেক ঘরছাড়া মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ, তাই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অসমের ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে জানান, গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ধীরে ধীরে ঘরে ফিরছেন। বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ থেকে আতঙ্কিত হয়ে যারা অসমে ফিরে এসেছিলেন, তারাও নিজেদের কর্মক্ষেত্রে ফেরা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, কী ভাবে ফেসবুক-ট্যুইটার বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দুষ্কৃতীরা গুজব, আতঙ্ক বা উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তা খুঁজে দেখা দরকার। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কোনও ভাবেই যাতে বাক্স্বাধীনতা লঙ্ঘিত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। |