প্রবাসে ফের ‘সন্তানহারা’ বাঙালি দম্পতি
বাঙালি মায়ের কোল আর এখন ততটা শান্তির জায়গা নয়। গত ডিসেম্বরে কথাটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন নরওয়ে প্রবাসী বাঙালি দম্পতি অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্য। আর এ বার বুঝলেন দেবাশিস ও পামেলা সাহা। ভট্টাচার্য দম্পতির মতো তাঁদের একমাত্র দুধের শিশু, এক বছরের তোজোকেও পাঠিয়ে দেওয়া হল শিশুকল্যাণ সংগঠনের হেফাজতে। অভিযোগও এক, সন্তানের লালনপালনে ত্রুটি। এ বার ঘটনাস্থল আমেরিকার নিউ জার্সি। নিরুপায় হয়ে দেবাশিসবাবু ভারতীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চেয়েছেন।
দেবাশিসবাবুর বাড়ি বালুরঘাটে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার চাকরি নিয়ে ২২ জুলাই নিউ জার্সি পৌঁছন তিনি। সঙ্গে স্ত্রী আর এক বছরের ছেলে ইন্দ্রাশিস ওরফে তোজো। সাহা পরিবার ওঠে মরিস কাউন্টির পার্সিপ্যানি শহরের ভাড়া বাড়িতে। সেখানে খেলতে খেলতে হঠাৎ খাট থেকে পড়ে যায় তোজো। ঘটনাটি ঘটে মাসখানেক আগে ৯ অগস্ট।
দেবাশিস ও পামেলা সাহা।
শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে দেবাশিসবাবু জানান, সে দিন বিকেল ৩টে নাগাদ ঘটে দুর্ঘটনা। তখন তিনি অফিসে। বাড়িতে মায়ের সামনেই খেলছিল তোজো। আচমকা খাট থেকে পড়ে জ্ঞান হারায় সে। স্থানীয় ‘ট্রমা সেন্টার’-এ নিয়ে যাওয়া হলে ‘সিটি স্ক্যান’-এ ধরা পড়ে, তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকেরা সাহা দম্পতিকে জানান, মাথা ছাড়াও রক্ত জমেছিল শিশুটির ডান চোখের পিছনে। ছিঁড়ে গিয়েছিল ঘাড়ের রগ।
ছেলে কবে সেরে উঠবে, এই চিন্তায় যখন সাহা দম্পতির মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, তখনই ‘সমস্যা’ শুরু। দেবাশিসের কথায়, “চিকিৎসকেরা পরিষ্কার বলে দিলেন, তিন ফুট খাটের উপর থেকে পড়ে গেলে নাকি এতটা চোট লাগা সম্ভব নয়। ওঁদের ধারণা, ভয়ঙ্কর মারধরের ফলে এতটা জখম হয়েছে তোজো।” হাসপাতাল থেকেই খবর দেওয়া হয় ‘নিউ জার্সি চাইল্ড প্রোটেকশন টিম’-কে। তারাই দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দেবাশিস-
ইন্দ্রাশিস।
পামেলাকে। পামেলাদেবীর কথায়, “ওঁরা বিশ্বাসই করতে চাইছেন না, আমরা ছেলেকে মারধর করিনি! যা হয়েছে, সেটা নেহাত দুর্ঘটনা।”
আপাতত দেবাশিস-পামেলার একটা দুশ্চিন্তা মিটেছে। ছেলে সুস্থ। কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে অন্য জায়গায়। সুস্থ হওয়ার পরেও গত শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে ছিল তোজো। ওই দিনই নিউ জার্সির একটি আদালতে ঘটনার বিশদ তদন্ত করতে চেয়ে আবেদন জানায় ‘নিউ জার্সি চাইল্ড প্রোটেকশন টিম’। একই সঙ্গে তারা আবেদনে বলে, তদন্ত চলার সময় বাচ্চাকে বাবা-মায়ের কাছে যেন রাখা না হয়। দেবাশিসবাবুর কথায়, “সেই আবেদন মেনে তোজোকে আপাতত একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পাঠিয়েছে আদালত।” সাহা দম্পতির ক্ষোভ, “তোজোর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না আমাদের। ফোন করে জেনেছি, ও ভীষণ কান্নাকাটি করছে।” শনিবার ছুটি থাকায় চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ‘নিউ জার্সি চাইল্ড প্রোটেকশন টিম’-এর সঙ্গে।
অনুরূপ-সাগরিকাকে তাঁদের দুই সন্তান অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে ফিরে পেতে কত আইনি লড়াই চালাতে হয়েছিল, তা ভাল ভাবেই জানেন সাহা দম্পতি। জানেন বালুরঘাটে কুণ্ডু কলোনির বাসিন্দা দেবাশিসবাবুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক নির্মলকৃষ্ণ সাহা ও মা সোনারানিদেবী। আর তাই তাঁরা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন “দুশ্চিন্তায় আমাদের ঘুম হচ্ছে না। অহেতুক অভিযোগ তুলে ওই দুধের শিশুকে বাবা-মায়ের কাছ ছাড়া করা হয়েছে। ওদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
দেবাশিসবাবু জানান, নিউ জার্সির আদালত বলেছে, তাঁরা যদি কোনও আত্মীয় বা পারিবারিক বন্ধুকে মনোনীত করেন, তা হলে সেই ব্যক্তির জিম্মায় তোজোকে রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। অনুরূপ-সাগরিকার দুই সন্তানকে এই ভাবেই তাদের কাকার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেবাশিসবাবুদের পরিচিত এমন কেউ এই মুহূর্তে নিউ জার্সিতে নেই। তার উপরে মামলা চালানোর বিপুল খরচ। সেটা এতটাই যে দেবাশিসবাবু উকিল দিতে পারেননি।
তা হলে? তাঁর একটাই খড়কুটো, নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কনস্যুলেট। জানালেন, সেখান থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন। আরও বললেন, “ওয়েবসাইট থেকে ই-মেল আইডি জোগাড় করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পুরো ঘটনা জানিয়ে মেল করেছি।” রাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। সুব্রতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই প্রয়োজনে এ ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করতে পারেন।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.