অভাবে আর অসুখে ধুঁকছে ডমনভিটা
সাত সকালেই দিনমজুরির খোঁজে বেরিয়ে যেতে হয় মা লোহারি মাঝিকে। দুপুরে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা বাড়িতে এসে কালাজ্বরের প্রতিষেধক মিল্টেফোসিন খাইয়ে দিচ্ছেন। ওষুধ তো মিলছে। কিন্তু খাবার কই? ক্ষিদের জ্বালায় কালাজ্বরে আক্রান্ত ৯ বছরের বোন দুকড়িকে কাঁদতে দেখে এদিক-সেদিক ঘুরে বেশ কয়েকটি পেয়ারা নিয়ে ফিরল দু বছরের বড় দিদি দুরগি। নুন, লঙ্কা মাখানো পেয়ারা খেয়েই দুপুর কাটল দুবোনের। কোনও কোনও দিন অবশ্য তাও জোটে না। অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় সন্ধ্যে পর্য়ন্ত। কাজ মিললে রাতে আধপেট খাবার জোটে। কাজ না মিললে সেটা জোটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। ১০ বছর আগে কালাজ্বরে স্বামী ফিটকালু মাঝির মৃত্যুর পর ৪ ছেলেমেয়েকে নিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন লোহারি দেবী। ভাঙাচোরা মাটির ঘর। অর্ধাহারে, অনাহারে ধুঁকলেও বিপিএল তালিকায় নাম নেই। নেই রেশন কার্ডও। মেলেনি বার্ধক্য ভাতা। শুধু লোহারি দেবীই নন। মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের ডমনভিটা এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার দুর্দশার ছবিটা একইরকম। এলাকাটি দরিদ্র গ্রামের তালিকা ভুক্ত বলে পঞ্চায়েত সূত্রেই জানানো হয়েছে। গ্রামের ৭০টি পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই অভাবী। কিন্তু বিপিএল রয়েছে মাত্র ৫টি পরিবারের। সাকুল্যে রেশন কার্ড রয়েছে ২৫টি পরিবারের। জব কার্ড থাকলেও মেলে না ১০০ দিনের কাজ বলেও অভিযোগ। বিপিএল তালিকায় নাম না থাকায় পঞ্চায়েত থেকে কোনও সাহায্যই মেলে না বাসিন্দাদের। ফলে কখনও একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। ফলে শরীরে অপুষ্টি। তা থেকে নানা রোগ। মালদহের জেলাশাসক শ্রীমতী অর্চনা বলেছেন, “যাদের নাম বিপিএল তালিকায় থাকার কথা, যারা রেশন কার্ড পাননি, তারা ব্লক অফিসে যোগাযোগ করবে। যদি তাদের যোগ্যতা থাকে, তা হলে ব্লক অফিস ব্যবস্থা করবে।” চাঁচল-১ বিডিও ভাস্কর মজুমদার বলেন, “ডমনভিটার বাসিন্দাদের বিপিএল বা রেশনকার্ড নেই সে বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। তবে স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট পেয়েছি। দুকড়ির পরিবারকে সাহায্য করা হবে। এ ছাড়া বিপিএল-এর সমীক্ষা শুরু হয়েছে। যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম তালিকায় যাতে থাকে তা দেখা হবে।” মালতিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় কংগ্রেস সদস্য দিগম্বর মন্ডল বলছেন, “আরে ডমনভিটার বাসিন্দারা তো জমিদার। যাঁরা সমীক্ষা করে বিপিএল তালিকা করেছেন তাদের খতিয়ান অন্তত তাই বলছে। প্রত্যেকেই আইএওয়াই পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিপিএল না হলে ঘরের টাকা বা অন্য সুযোগ মিলবে কী করে? পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রশাসনের কাছে বহুবার আর্জি জানিয়েও ফল হয়নি।” ওই গ্রামের লাহারি দেবী জানান, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে ১০ বছর কেটে গেলেও বিধবা ভাতা পাননি। তিনি বলেন, “একবেলা পেটপুরে খাবার জোটে না। কী ভাবে বেঁচে আছি কেউ দেখে না।” এলাকার আরেক বাসিন্দা অরুণ মাঝি বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে কোনও সাহায্য মেলে না। বিপিএল-এর জন্য, রেশন কার্ডের জন্য যোগাযোগ করলেই পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়, খবর দেব। সেই খবর ১০ বছরেও আসেনি।” একই অবস্থা কৈলাশ মাঝি, গীতা মাঝিদের। সিপিএমের নেতা তথা এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান মিনারুল হোসেন অবশ্য সকলকেই আশ্বাস দিয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, “রেশন কার্ডের বিষয়টি জানা নেই। তবে সমীক্ষা চলছে। এবার ওরা বিপিএল তালিকায় চলে আসবে।”
চাঁচলের সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস কিন্তু উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় একাধিকবার কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। কিন্তু আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। আগে তো সামাজিক উন্নতি দরকার। তা হলেই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে।” মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি অবশ্য প্রশাসনকেই দূষেছেন। তাঁর অভিযোগ, “দরিদ্র বাসিন্দাদের উন্নতির দিকে প্রশাসনের কোনও লক্ষ্য নেই। সে জন্যই এমন হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.