|
|
|
|
ফলন বাড়বে আনারসে |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • শিলিগুড়ি |
ছোট চা বাগানের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে উত্তরের আনারস। গত বছর প্রায় দুশো কোটি টাকার ব্যবসা করে ওই ফসল। এ বার ব্যবসা আরও বাড়বে আশা উদ্যান পালন বিশেষজ্ঞদের। দফতরের দার্জিলিং জেলা আধিকারিক বিপ্লব সরকার বলেন, “ছোট চা বাগান গড়ে তোলার ঝোঁক বেড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গে আনারস চাষ উদ্বেগজনক ভাবে কমে যায়। ধারাবাহিক চেষ্টায় পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টেছে। আশা করছি দ্রুত হারানো এলাকা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।” কয়েক বছর আগেও এমন আশার কথা মুখে আনতে সাহস হয়নি দফতরের বিশেষজ্ঞদের। উল্টে উত্তরবঙ্গে আনারসের অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেই প্রশ্নের সামনে পড়ে বিব্রত হয়েছেন। কেন এমনটা হবে না! ২০০০ সালে আনারস চাষের এলাকা ছিল প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর। চা পাতার বাজার হঠাৎ তেজি হলে চাষিদের অনেকে খেত ভেঙে চা বাগান গড়ে তুলতে শুরু করে। উদ্যান পালন দফতরের ২০০৫ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় ওই বছর আনারস চাষের এলাকা কমে মাত্র ৫ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে মাত্র পাঁচ বছরে ১২ হাজার হেক্টর জমি আনারসের দখল থেকে চলে যায়। দফতরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ প্রণবকুমার সাহা বলেন, “উদ্বেগজনক ওই ঘটনা জানার পরে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তার সুফল এখন ফলতে শুরু করেছে।” কেন আনারস বাগান তুলে চাষিরা চা চাষে ঝুঁকেছে! উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা জানান, ওই সময় আনারস চাষে খরচ বাড়ে কিন্তু বাজারে ফসলের দাম মেলেনি। উল্টো দিকে তেজি বাজার থাকায় তুলনায় অনেক কম খরচ করে বেশি রোজগার সম্ভব হয়েছে চা বাগান থেকে। ওই সুযোগে কতটা সম্প্রসারিত হয়েছে চা বাগান এলাকা? জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে উত্তরবঙ্গে প্রায় ৭ হাজার ছোট চা বাগান ছিল। ২০১০ সালের মধ্যে সেটা বেড়ে হয় ২৩ হাজার। চাষিরা ওই সময় বিঘা প্রতি বাগান থেকে প্রায় আড়াই হাজার কেজি কাঁচা পাতা পেয়েছে। কেজি প্রতি পাতা উৎপাদন খরচ ছিল প্রায় ৬ টাকা। বাজারে সেটা বিক্রি হয়েছে ১২ টাকা দামে। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “ভাল বাজার দর দেখে আনারস চাষিদের অনেকে ওই সময় চা বাগান তৈরিতে ঝুঁকেছেন। কিন্তু এর পরে চা বাগানে উৎপাদন খরচ বাড়ে। সেই সঙ্গে পাতার বাজারেও মন্দা দেখা দেয়। ফলে অনেক চাষি ফের আনারস চাষে ফিরে যেতে শুরু করে।” শুধু কী চা পাতার দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা আনারস চাষে ফিরছেন! উদ্যানপালন দফতরের কর্তাদের দাবি কয়েকটি কারণের সেটি একটি মাত্র। রয়েছে আনারস চাষে উৎসাহ দিতে সরকারি অনুদান ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করা। ধারাবাহিক প্রচার। ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে ওঠা বাজার। উদ্যান বিশেষজ্ঞ প্রণববাবু জানান, ওই সমস্ত কারণে ২০০৭ সাল থেকে আনারস চাষের এলাকা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। গত বছর প্রায় দেড় লক্ষ টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। বিঘা প্রতি চাষিরা ৬০ হাজার টাকা ঘরে তুলেছেন। |
|
|
 |
|
|