হাসনাবাদের কাটাখালি সেতুর উপরে নির্মীয়মাণ সেতুর একটি পিলারের কংক্রিট ক্ষয়ে গিয়ে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ‘নড়বড়ে’ পিলারের উপরে সেতু তৈরি হলে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদেরই একাংশ পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এ বিষয়ে ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ করেছেন।
ঘটনাটি শুনে পূর্ত ও সড়কমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “এখনও রিপোর্ট আসেনি। যদি এমন ঘটে থাকে এবং তার পিছনে কোনও গাফিলতি থাকে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ঘটনার গুরুত্ব কতটা, তা নিয়ে সোমবার দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।” বসিরহাট মহকুমা পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারাংয়ের কথায়, “বিষয়টি শুনেছি। সোমবার দফতরের বাস্তুকারদের এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার অরূপ সরকার বলেন, “কোনও কারণে জলের উপরের অংশে পিলার ঢালাইয়ের সময়ে নীচের পিলারের উপরে বালি পরিষ্কার না করায় জোড়ার মুখে ফাঁক দেখা দিয়েছে। মনে হয় মেরামতি সম্ভব। বড় কোনও সমস্যা হবে না।” |
২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে হাসনাবাদ ও পার হাসনাবাদের মধ্যে এই সেতুটির শিলান্যাস হয়। বুদ্ধবাবু সে দিন জানিয়েছিলেন, ২০০৯ সালের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শেষ হবে। যদিও ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়েও সেতুর কাজ গতি পায়নি। এর মধ্যে রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে। সেতু নির্মাণে ‘ঢিলেমি’র কথা জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই নির্দেশে সুদর্শনবাবু হাসনাবাদে এসে সেতু তৈরির কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে বলে নির্দেশ দেন। সেই মতো মাস খানেক ধরে কাজে গতি বেড়েছে।
পূর্ত দফতর ও মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, নদীর দু’পাড়ে দু’টি পিলারের উপরে সেতু তৈরি হওয়ার কথা। গত কয়েক বছরে নদীবক্ষে দু’টি পিলার এবং অ্যাপ্রোচ রোডে আরও কিছুটা কাজ এগিয়েছে। ৩৫ মিটার উঁচু পিলারের ১৮ মিটার আছে জলের তলায়। গম্বুজাকৃতি পিলারের নীচে দিকে ভাটার সময় নদীর জল সরে যায়। সে সময়ে পিলার-সংলগ্ন কংক্রিটের ঘেরা অংশে প্রচুর মাছ আটকে থাকে। ওই মাছ ধরতে ভিড় করেন অনেকে। দিন কয়েক আগে মাছ ধরতে গিয়েই স্থানীয় বাসিন্দা খোকন গাজি দেখেন, একটি পিলারের কংক্রিট অনেকটা ক্ষয়ে গিয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ায় আরও অনেকে যান সেই পরিস্থিতি দেখতে। তাঁদেরই এক জন, ‘সুন্দরবন বাজার ব্যবসায়ী সমন্বয় কমিটি’র সম্পাদক তুলসি চক্রবর্তী বলেন, “পিলারের কিছু অংশে কংক্রিট জলে ধুয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও রড বেরিয়ে এসেছে। নোনা জল লেগে তা-ও নিশ্চয়ই দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সব মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এমন পিলারের উপরে সেতু তৈরি হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে।” টাকি পুরসভার কাউন্সিলর সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পিলারের জোড়ার অংশে মশলা না থাকায় যে ভাবে ফাঁক হয়ে গিয়েছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে পিলারটি ভেঙে পড়তে পারে। ভয়াবহ পরিস্থিতি।”
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরের বাস্তুকারেরা রিপোর্ট দিলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। কাজ শুরু হওয়ার পরে স্থানীয় মানুষ সে ব্যাপারে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেতুর পিলারের এমন দশা তাঁদের সেই আশায় ফের জল ঢেলে দিল। |