শেষ শ্রাবণের বৃষ্টিতে পাট ও আমনচাষিরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। চলতি মরসুমে বৃষ্টিপাতের অভাবে পাট পচানো ও আমন বোনার ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
অগস্টের প্রথম থেকেই নিয়মিত বৃষ্টিপাত কিছুটা হলেও চাষিকে ভরসা যুগিয়েছে। বৃষ্টির দেখা মেলায় চাষের ক্ষেত্রে যে প্রভূত উপকার হয়েছে তা স্বীকার করছেন সাধারণ চাষি থেকে কৃষিবিজ্ঞানী সকলেই। পাশাপাশি সরকারি কৃষি আধিকারিকরাও একই সুরে জানাচ্ছেন আগের তুলনায় অবস্থা অনেকটাই ভালো। নদিয়ার বড় আন্দুলিয়ার সুবল হালদার বা ধুবুলিয়ার তপন বিশ্বাস বলেন, শ্রাবণের এই বৃষ্টি আমাদের বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাল। সুবলবাবুর কথায়,“এই বৃষ্টি না হলে আলুর পর আমনেও ঝাড় খেতে হত। বৃষ্টি না হলে স্ত্রী-র গয়না বিক্রি করে মহাজনের দেনা শোধ করতে হত। এখন মনে হচ্ছে তা আর করতে হবে না।” |
তপনবাবু বলেন, “বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো চাষে ক্ষতি হয়েছিল। এবার ভেবেছিলাম জলের অভাবে পাট পচাতে পারব না। পাটেও লোকসান গুনতে হবে। কিন্তু শেষমেশ বৃষ্টি হওয়ায় পুকুর বা নয়ানজুলিতে কিছুটা জল জমেছে। তা দিয়ে পাট পচানো যাবে। এখন পাট কাটার তোড়জোড় চলছে।’’ অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বৃষ্টির ছবিটা কিছুটা বদলে গিয়েছে। নদিয়া জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ১৭ তারিখে সর্বোচ্চ ৪৩.৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২১ অগষ্ট বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ১৮.২০ মিলিমিটার। নদীয়ার যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা হরেন্দ্রকুমার সেন বলেন,“শুখা পরিস্থিতি এখন আর নেই। বৃষ্টির ঘাটতি এখনও পুরোপুরি মেটেনি। তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে ঘাটতির পরিমান ক্রমশ কমে আসছে। জেলায় প্রায় এক লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। এখনও পর্যন্ত ৭৮ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে আমন বোনা হয়েছে। বাকিটা দ্রুত বোনার কাজ চলছে। পাট পচানোর জলের অভাবও মিটেছে।” বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপনকুমার মাইতি বলেন,“পাট পচানোর জলের জন্য এখনও কিছুটা সময় আছে। আমাদের ধারনা এখনও বৃষ্টি হবে। তবে আমনের জন্য জলের যে অভাবটা ছিল সেটা এই বৃষ্টিতে অনেকটাই মিটেছে। চাষিরা স্বস্তিতে।” বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) পার্থ ঘোষ জানান, চলতি মাসের শেষের দিকে বেশ খানিকটা বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা এখন অনেকটাই চিন্তামুক্ত। সবচেয়ে আশার কথা দিনে ঝলমলে রোদ আর রাতে বৃষ্টির যে ধরনটা এখন চলছে তা আমনের পক্ষে খুবই উপকারী। |