গ্যাসের বেআইনি কারবার • পুলিশকে মারধর • হেনস্থা এসডিও
উমরাপুরে ছাই পাঁচটি দোকান, তাণ্ডব
ড় সিলিন্ডার থেকে অবৈধ ভাবে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরতে গিয়ে আগুন লেগে ছাই হয়ে গেল পাঁচটি দোকান। রবিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ রঘুনাথগঞ্জ থানার উমরপুর এলাকায় এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। দমকল আসতে দেরি করার অভিযোগে শুরু হয়ে যায় হট্টগোল। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মারমুখী জনতার হাতে আক্রান্ত হন তাঁরাও। হেনস্থা করা হয় জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসককে। ভাঙচুর করা হয়েছে দমকলের একটি গাড়ি। ছুটির দিন সকালে প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে চলে এই তাণ্ডব। ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় তিন কংগ্রেস বিধায়কও। শেষ পর্যন্ত দুপুর ১টা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠি চালিয়ে সরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতাকে। এই ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত কাউকেই অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি।
রীতিমতো জনবহূল এলাকায় এই মোড়ে ঘটনাস্থলের পাশেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা দফতরও রয়েছে। রান্নার গ্যাসের একটি বড় সিলিন্ডার থেকে অবৈধ ভাবে কিছু ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সময়ে তা থেকেই আগুন লাগে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। এই ছোট ঝুপড়ি মতো দোকানে অবৈধ ভাবে ওই কাজ হচ্ছিল। এক বার আগুন লেগে যাওয়ায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দোকানে ছিল আরও ছ’টি বড় সিলিন্ডার। সেগুলিতেও একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে। ছুটির দিন সকালে এই শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এই মোড় থেকে সামান্য দূরেই পশু হাট বসেছিল। তাই এই দিন লোকজনও ছিল অনেক বেশি। বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। তারপরেই দেখা যায় ওই দোকানটিতে আগুন লেগে গিয়েছে। আগুন লেগে যায় পাশাপাশি একটি সেলুন, মুদিখানার দোকান সহ পর পর পাঁচটি দোকানে। এই সময় থেকেই উত্তেজনার শুরু।
আগুন লাগার পরে উমরাপুর মোড়। তারপরে শুরু হয় ভাঙচুর।
ওই এলাকার চালু এই মুদি দোকানটির মালিক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “দোকানে ভালই ভিড় ছিল। হঠাৎই বিকট শব্দ। তারপরেই দেখি আগুন লেগেছে বলে চিৎকার। প্রাণ বাঁচাতে সবাই দোকান ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যাই। তখনও একটির পর একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হচ্ছে।তাই কাছে যেতে সাহসই পাচ্ছিল না কেউ। দোকান থেকে মালপত্র বার করাও যায়নি।” তিনি জানান, আশেপাশে জলের ব্যবস্থাও সে ভাবে নেই। তাই আগুন নেভানোর চেষ্টাও সে ভাবে করা যায়নি। তাঁর কথায়, “প্রায় ৬ লক্ষ টাকার সামগ্রী ছিল দোকানে। সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।”
বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, “অনেক দিন ধরেই ওই দোকানটিতে অবৈধ ভাবে গ্যাসের কারবার চলছিল। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও ওই বিপজ্জনক কারবার বন্ধ হয়নি। শনিবার সন্ধ্যাতেও একবার গ্যাসের গন্ধ পেয়েছিলাম। তখনই োই দোকানের মালিককে বলেছিলাম সতর্ক হতে। কিন্তু তিনি কিছুই শুনলেন না।”
পশু হাট থেকে অনেক মানুষ এই দিন ছুটে ঘটনাস্থলে চলে যান। ধুলিয়ানের দমকল কেন্দ্রে খবর দেওয়া হলেও আগুন নেভাতে তাঁরা আসতে দেরি হয়েছে অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। দফায় দফায় পুলিশ এলেও তাঁরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। এক জন হোমগার্ডকে মারধর করা হয়েছে। দুই পুলিশকর্মীকে একটি ছোট ঘরে ঢুকিয়ে কিছু ক্ষণ আটকে রাখা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
মহকুমাশাসকও প্রথমে বিক্ষোভের মুখে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে যান। কংগ্রেসের তিন বিধায়কও প্রথমে ঘটনাস্থলে গিয়েও ফিরে যেতে বাধ্য হন। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারপরে আবার সবাই সেখানে ফেরেন।
সুতির বিধায়ক কংগ্রেসের ইমানি বিশ্বাস বলেন, “রঘুনাথগঞ্জ একটি মহকুমা শহর। তবু সেখানে কোনও দমকল কেন্দ্র নেই। তাই আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে।”
কিন্তু কী ভাবে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় সকলের চোখের সামনে অবৈধ গ্যাসের কারবার চলছে? জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এনাউর রহমান বলেন, “জঙ্গিপুরের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের গ্যাস ভরাটের বেআইনি এবং বিপজ্জনক কারবার চলে বলে অভিযোগ পেয়েছি। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কী ভাবে গোপনে ওই ব্যবসায়ীদের হাতে গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে যাচ্ছে, তা তদন্ত করতে বলা হয়েছে পুলিশকে।” জঙ্গিপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ওয়াংডেন ভুটিয়া বলেন, “রান্নার গ্যাসের বড় সিলিন্ডার থেকে অবৈধ ভাবে ছোট ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরানোর সময়েই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। উত্তেজনা সামাল দিতে গিয়ে পুলিশও আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।”
ইন্ডিয়ান অয়েলের গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর অম্বিকা সিংহ বলেন, “আমাদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে সিলিন্ডার পাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। চোরা পথে চড়া দামে এই সিলিন্ডার সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের উচিত অবিলম্বে এই কারবার বন্ধ করে দেওয়া।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.