|
|
|
|
কুম্বলে-হরভজনের উত্তরাধিকারী পেয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেট |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • হায়দরাবাদ |
ভারত (৪৩৮)
নিউজিল্যান্ড (১৫৯ ও ১৬৪) |
ঠিক দুপুর তিনটেয় নেটওয়ার্কিং সাইটে অদ্ভুত একটা মেসেজ ভেসে উঠল।
‘গড অব নেশনস হেল্প আস ইউজ আওয়ার ফিট/ অ্যান্ড নট বি ক্রিজবাউন্ড ইন দিস হিট/ হিয়ার আওয়ার প্লিডিংস উই এনট্রিট/ টার্ন স্টিভ ডেভিস আইজ আ ফার...গড ডিফেন্ড দিস অ’ফুল ব্যান্ড!’
বাংলা তর্জমাটা দাঁড়ায় এ রকম: হে জাতির ঈশ্বর, আমাদের পা ব্যবহার করতে সাহায্য করুন। এই গরমে যেন ক্রিজে আটকে যেতে না হয়। আমাদের অনুনয় শুনুন। স্টিভ ডেভিসের চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিন...।
অবাক লাগছে? কিছুই না, ওটা নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীতের ‘প্যারডি’! নিছক মজা হলে কী হবে, প্রত্যেক লাইনে কিউয়িদের দুর্ভোগের কাহিনি এতে বলা। আম্পায়ার স্টিভ ডেভিসের আঙুল এ দিন তাঁদের ভোগাল। ম্যাকালাম বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার। কিউয়ি শিবিরের আরও অভিযোগ, ম্যাকালাম ছাড়া আরও কয়েক জনকে আম্পায়ার ডেভিস ঠিক আউট দেননি। এ দিন আউট হওয়ার পর অঙ্গভঙ্গি করার জন্য ম্যাকালামকে ভর্ৎসনাও করেছেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড।
তবে আম্পায়ারিং বিতর্ক হল পার্শ্বচিত্র। স্পিনের সামনে নিউজিল্যান্ডের অসহায় আত্মসমর্পণটা আসল কাহিনি।
অশ্বিন-আগুনের মুখে পড়ে টেলরদের ফুটওয়ার্ক বলে বস্তু রইল না। ঈশ্বরের কাছে বরং এই কান্নাকাটিই স্বাভাবিক। বৃষ্টির কোপে পড়ে ম্যাচ ইলাস্টিকের মতো বেড়ে পাঁচ দিনে যায়নি, চার দিনেই নিউজিল্যান্ডের দফারফা। ভারত জিতল ইনিংস ও ১১৫ রানে। কিন্তু সেটা নয়, বরং অনেক বড় ক্যানভাসে হায়দরাবাদ টেস্টকে ধরতে গেলে একটাই কথা লিখতে হবে। |
|
অধিনায়কের সঙ্গে ম্যাচের নায়ক। ছবি: পিটিআই |
ভারতের স্পিন-আকাশে রোদ্দুরের নাম এখন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কুম্বলে-হরভজনের উত্তরাধিকার যাঁর হাতে তুলে দেওয়া যায়!
কী আছে নয়, তামিলনাড়ু অফস্পিনারের ঝুলিতে কী নেই, সেটা নিয়েই তর্ক চলতে পারে। পরপর দু’ইনিংসে ছ’উইকেট নেওয়ার ঘটনা, ইদানীং কালে খুব বেশি নেই। নিজামের শহরে অশ্বিনের ম্যাচ-হিসেব এক কথায় অসাধারণ। ৪৩.২-১৪-৮৫-১২! টেস্টে তাঁর সেরা বোলিং। আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট ৫৪ রানে। ইচ্ছেমতো টপস্পিন, ড্রিফটার, ক্যারম বল বেরিয়েছে। রস টেলরকে যে ডেলিভারিতে নিলেন, তা যে কোনও স্পিনারের স্বপ্নের লকারে তোলা থাকবে। অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বলটাকে পড়তে দেখে পা বাড়িয়ে ছাড়তে গেলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে আবিষ্কার করলেন অফস্টাম্পের বেল নেই! কেউ কেউ উপায় না পেয়ে রিভার্স সুইপের রাস্তায় হাঁটতে চাইলেন। লাভ হল না। বরং ভারতীয় স্পিনারের ‘ক্যারম’ বলগুলো শুধু তাঁদের প্যাডে জমা হতে লাগল। সাধে কী দেশের দুই কিংবদন্তি প্রাক্তন স্পিনার আনন্দবাজারকে রায় দিলেন যে, হরভজন সিংহের দিন শেষ! এরাপল্লি প্রসন্নের মতে, ভারতীয় স্পিনের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নাম অশ্বিন। “হরভজন এখন কোথায়? নামটা উঠছেই বা কী করে? ওর জায়গাতেই তো অশ্বিন খেলছে,” ‘টার্বুনেটর’-এর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নে রীতিমতো বিরক্তি প্রসন্নর গলায়। অশ্বিনের লাইন-লেংথ ঠিক রাখার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করছে। বিষেণ বেদী আবার অতশত আলোচনাতেই ঢুকতে চান না। শুধু বললেন, “অশ্বিনের কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ ও সব প্রশ্নে ঢুকব কেন? ছেলেটা যে এত উইকেট পাচ্ছে, সেটাই তো ওকে নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর।” |
• ভারতের ৮০ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৪৬৩ ম্যাচে অশ্বিনের বোলিং হিসেব (১২-৮৫) পঞ্চম সেরা।
•
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে একটি টেস্টে সর্বাধিক উইকেট নরেন্দ্র হিরওয়ানির। ১৬ উইকেট।
•
অশ্বিন ছাড়াও আরও ৬ ভারতীয় বোলারের ম্যাচে ১২ উইকেট আছে। তবে অশ্বিনের বোলিং হিসেবই সেরা।
• ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ম্যাচে দশ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রান দিলেন অশ্বিন। |
|
শোনা যায়, চোদ্দো বছর বয়সে কোমরে একবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল অশ্বিনের। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ক্রিকেট কেন, হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। ছোটবেলায় যিনি জীবনের প্রতিবন্ধকতাকে সামলাতে শিখেছেন, বাইশ গজের চ্যালেঞ্জ তাঁর কাছে কী এমন? রবিবার একটা সময় কিছুতেই উইকেট পাচ্ছিলেন না। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী’-র পণ নিয়ে উইকেটে তাঁর সামনে পড়ে ছিলেন ম্যাকালাম আর উইলিয়ামসন। ম্যাকালামের এলবিডব্লিউ নিয়ে বিতর্ক থাকবে। টিভি রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে, বল আগে ব্যাটে লেগেছিল। উইলিয়ামসনের উইকেটও অশ্বিন পাননি। কিন্তু টেলর-সহ বাকিদের যে ভাবে সাফ করে দিলেন, তাতে কিউয়িদের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। মনে হতে পারে, সত্যিই এই টিম আইসিসি-র এলিট গ্রুপে থাকার যোগ্য তো? নাকি অ্যাসোসিয়েট দেশের সদস্য হতে বেশি দেরি নেই? একা অশ্বিনকে সামলাতে গিয়েই তো দু’টো ইনিংস খসে গেল দু’শোরও কমে।
তবু নায়ক বিপক্ষকে তাচ্ছিল্যের রাস্তায় যাবেন না। এর পরেও এমন দুবলা প্রতিপক্ষকে যথাযথ সম্মান দেবেন। বলবেন, “ওরা কিন্তু গত বার ভাল খেলেছিল।” দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের শেষেও তাঁর গলা থেকে বেরোবে, “পারফরম্যান্স ভাল হোক বা খারাপ, আমি কখনও উত্তেজিত হই না।” রবিচন্দ্রন অশ্বিন মানুষটা এ রকমই। শান্ত। ভদ্র। আবার নিজের কাজে তীক্ষ্ম।
পড়ন্ত বিকেলে অশ্বিনের হাত দিয়ে গুলাম আমেদকে নিয়ে লেখা বই উদ্বোধন করলেন এইচসিএ কর্তারা। কিংবদন্তি স্পিনারের ৮৯-তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে। প্রতীকী ছবি মনে হচ্ছে? হোক। আজকের জন্য অন্তত তাতে ক্ষতি নেই।
|
স্কোর |
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৪৩৮। |
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস (১৫৯) |
নিউজিল্যান্ড
দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৪১-১) |
ম্যাকালাম এলবিডব্লিউ উমেশ ৪২,
উইলিয়ামসন ক সহবাগ বো ওঝা ৫২,
টেলার বো অশ্বিন ৭,
ফ্লিন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১১,
ফ্র্যাঙ্কলিন ক সহবাগ বো অশ্বিন ৫,
ফান উইক এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১৩,
ব্রেসওয়েল ক কোহলি বো ওঝা ১,
পটেল নঃআঃ ৬,
বোল্ট ক সহবাগ বো অশ্বিন ০,
মার্টিন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ০,
অতিরিক্ত ১১
মোট ১৬৪।
পতন: ২৬, ৯৮, ১০৫, ১৩৮, ১৪২, ১৪৫, ১৪৮, ১৬০, ১৬৪।
বোলিং: ওঝা ২৮-৯-৪৮-৩, জাহির ১৩-৫-১৭-০, উমেশ ১০-১-৩২-১,
অশ্বিন ২৬.৫-৯-৫৪-৬, রায়না ২-১-২-০। |
|
|
|
|
|
|
|