....শেষ কুড়ি ওভার খেলাটা সবচেয়ে মন দিয়ে দেখেছি। রীতিমত টেনশন হচ্ছিল যে, উন্মুক্ত চন্দ স্ট্রাইক রোটেট করছে না কেন? জেতার পরেও মনে হচ্ছে ওই সময় দুটো ওভার মেডেন দিয়ে দেওয়া খুব বিপজ্জনক হতে পারত। উন্মুক্তের স্ট্র্যাটেজিটা পরিষ্কার ছিল। সিঙ্গলসে যাব না। বড় হিট নেব। আজ থেকে পাঁচ-ছ’বছর পর আশা করি সিনিয়র ভারতীয় দলে ও খেলবে। দেখবেন তখন অবিকল পরিস্থিতিতে পড়লে ও কিন্তু সিঙ্গলস নেবে।
অনূর্ধ্ব ১৯-এর সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের এখানেই অনেক টুকরোটাকরা অথচ গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। অস্ট্রেলিয়ায় ওদের জেতা দেখতে দেখতে দারুণ রোমাঞ্চ হচ্ছিল। আর মনে হচ্ছিল টিমের আড়ালে থাকা মানুষগুলোকেও অভিনন্দন জানানো উচিত। এই পর্যায়ে ক্যাপ্টেনের চেয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট নীতি নির্ধারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। সিনিয়র ক্রিকেটে যা হয় না। সিনিয়রদের ক্রিকেটে ক্যাপ্টেনই প্রথম ও শেষ কথা। কিন্তু এখানে যেহেতু গোটা টিমটাই অনভিজ্ঞ, তাই সিনিয়র টিম ম্যানেজমেন্টই ম্যাচের মডেল তৈরি করে। |
উনিশের জোশ। টাউন্সভিলে অস্ট্রেলিয়া-বধের পর। ছবি: পিটিআই |
বিশেষ করে কোচ। দারুণ ভাল লাগছে যে, একসঙ্গে আমরা এখন দুটো বিশ্বকাপের অধিকারী। আমার মনে আছে, ন্যাটওয়েস্ট ও রকম রোমাঞ্চকর ভাবে জেতার পর কেউ কেউ বলেছিল, আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আবার লর্ডসেও পতাকা তুললাম। সন্দেহ নেই, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ২৬ অগস্টও একটা মাইলফলক হয়ে থাকল।
এ বার একটু আশঙ্কার কথাও বলে ফেলি। ২০০০ সালে যখন প্রথম আমরা অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতি, তখন এতটা না হলেও প্রচুর উচ্ছ্বাস ছিল দেশ জুড়ে। সবাই বলেছিল, এই তো এসে গেল ভারতের ভবিষ্যৎ দল। পরে দেখা গিয়েছিল সেই দলটা থেকে যুবরাজ সিংহ, আমি আর কিছুটা অংশে রীতিন্দর সিংহ সোধি ছাড়া কেউই সিনিয়র টিমের হয়ে খেলেনি। অজয় রাতরা ছিল। কিন্তু না থাকার মতো। এই স্ট্যাটিস্টিক্সটা তুলে দিলাম এটা বোঝানোর জন্য যে, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া আর তেন্ডুলকরের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার মধ্যে বিস্তর তফাত। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে যারা জিতল, আমার সেই ভাইদের সতর্ক করতে চাই, চারপাশ থেকে যে যা বলুক, কান দিও না। সংবর্ধনা দিতে পারে। বাড়িতে টিভি ক্যামেরা অনবরত ঢুকতে পারে। বোর্ড পুরস্কার দিতে পারে। কোনও কিছুতে ভ্রূক্ষেপ কোরো না। আসল হল দেশের সিনিয়র টিমের হয়ে খেলা। ওটাই প্রান্তিক স্টেশন।
তোমরা মনে রেখো, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জেতার পরেও পরবর্তী দুটো ধাপ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। রঞ্জি ট্রফি এবং ভারতীয় ‘এ’ দল। এই দুটো ধাপ যদি সফল ভাবে ডিঙোতে পারো, তার পরেই না রিয়্যাল ইন্ডিয়া ক্যাপ! উন্মুক্ত চন্দের টিমটার এনার্জি দেখে আমার ভীষণ ভাল লেগেছে। একটা কোনও দল টুর্নামেন্টে পরের পর লো-স্কোরিং ম্যাচ জিতে যখন ওঠে, তখন তার এনার্জি-ক্ষরণটা অনেক বেশি হয়। এরা পরপর যে ভাবে কম স্কোরের ম্যাচ জিতছিল, ফাইনালের আগে এনার্জিতে টান পড়ার ভয় ছিল। আমি দুরন্ত কৃতিত্ব বলব যে, তাতেও এরা দমে যায়নি। |
মহম্মদ কাইফ |
• ১৩ টেস্টে ৬২৪ রান, সর্বোচ্চ ১৪৮ ন.আ.।
•
১২৫টি একদিনের ম্যাচে ২৭৫৩ রান, সর্বোচ্চ ১১১ ন.আ.।
•
প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান রয়্যালসের সদস্য। |
|
সমস্যা হল, এনার্জি একটা পর্যায় অবধি নিয়ে যেতে পারে। তার পর শুধুই পারফরম্যান্সকে নির্ভর করে পথ চলা। রঞ্জিতে প্রচুর রান করতে হবে। নিয়মিত সেঞ্চুরি করতে হবে। এই টিমটার যারা বোলার তাদের ক্রমাগত উইকেট নিতে হবে। এর পর আসবে ‘এ’ দলের সিঁড়ি। সেখানেও পারফর্ম করলে তার পর সিংহদুয়ার। অনেক সময় শুরু করা যায়, এই লম্বা জার্নিটা করা যায় না।
আজকের আনন্দের দিনে আমি ট্রফি নয়, ওদের মনে করিয়ে দিতে চাই সামনের জার্নিটার কথা। এই সফরটা কিন্তু খুব লম্বা আর কষ্টকর। আমার বিশ্বকাপজয়ী টিমের অভিজ্ঞতা দেখে শিখেছি, কাপ জেতাটা নিছকই স্টেশন থেকে গাড়ির বার হওয়া। গন্তব্য অনেক দূর।
এই মুহূর্তে তা হলে ওদের কী করা উচিত? আমার মতে, আজকের জেতা থেকে মনোবল সংগ্রহ করে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ভবিষ্যতের লড়াইয়ে। যে লড়াই অনেক কঠিন হবে।
কেউ কেউ বলছেন এদের আইপিএল থেকে সরিয়ে রাখা উচিত। আমি মানি না। বরঞ্চ আমার বিশ্বাস আইপিএলে বড়-বড় প্লেয়ারের সঙ্গে ড্রেসিংরমে গা শোঁকাশুঁকি করলে, ফার্স্ট হ্যান্ড একসঙ্গে ট্রেনিং করতে পারলে ওদের লাভই হবে। উন্মুক্ত চন্দ যেমন। ও যদি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে খেলে তা হলে সহবাগ কী ভাবে ট্রেন করে, ডেভিড ওয়ার্নার কী ভাবে ম্যাচের জন্য তৈরি হয়, এগুলো সব কাছ থেকে দেখতে পাবে। এই অভিজ্ঞতা থেকে ওদের সরিয়ে রাখার মানে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা হল, দাদাদের আইপিএলে দেখে ওরা বুঝবে গাড়ি প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছবার পর আবার নতুন ট্রেনে উঠতে হয়। শেখার কোনও শেষ নেই। |