যে সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক উত্থান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই সিঙ্গুরকেই হাতিয়ার করে নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে কংগ্রেসও। রবিবার সিঙ্গুরে সভা করে তেমনই ইঙ্গিত দিলেন এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা।
চাষিদের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করা যাবে না, এই দাবি তুলে ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর ব্লক অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের নামের তালিকায় কারচুপি করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সেই ২৫ সেপ্টেম্বরই ওই ব্লক অফিস ঘেরাও করতে চলেছে কংগ্রেস।
সিঙ্গুরে এ দিন ওই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, দলের সাংসদ অধীর চৌধুরী এবং শঙ্কর সিংহ, আব্দুল মান্নান, দিলীপ নাথের মতো নেতারা। অবশ্য সিঙ্গুরের মানুষের ‘মন পেতে’ আদালতের বাইরে সমস্যা মেটানোর উপরেও তাঁরা জোর দেন। সাম্প্রতিক নানা ঘটনার কথা তুলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সমালোচনাতেও সরব হন। |
প্রদীপ বলেন, “সিঙ্গুরে চাষিদের সঙ্গে তঞ্চকতা করা হয়েছে। জনগণ তৃণমূলের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতবেন এই সিঙ্গুরের মাটিতেই!” একই সঙ্গে বলেন, “উনি (মমতা) তো একলা লড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আমি ঘোষণা করলাম, রাজ্যের ৬১ হাজার পঞ্চায়েত আসনেই প্রার্থী দেবে কংগ্রেস।” অধীর চৌধুরী আদালতের বাইরে গিয়ে সিঙ্গুর সমস্যা মেটানোর উপরে জোর দেন। টাকার জন্য তিনি রাজ্য সরকারকে কাছে ‘সিঙ্গুর ট্যাক্স’ বসানোরও প্রস্তাব দেন। মান্নানের কটাক্ষ, “এখন তো সিঙ্গুরের মাটিতে মমতার পা পড়ে না।” নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর বলেন, “এখানে এমন এক জন মুখ্যমন্ত্রী আছেন, যিনি নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সিঙ্গুর নিয়ে ঝুরি ঝুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।” আবার নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, “এই জেলায় যাঁকে এসপি করা হয়েছে, সেই তন্ময় রায়চৌধুরী নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের সময়ে মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন।”
রাজ্যে সম্প্রতি কয়েকটি ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করে অধীর বলেন, “উনি নিজে মহিলা হয়ে মহিলাদের অপমান করেছেন। ওঁর মুখে এক সময়ের জ্যোতিবাবু-বুদ্ধবাবুর সুর শুনতে পাচ্ছি। এখন উনি সিপিএম বনে গিয়েছেন!” শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি
বলেন, “জনগণ সারের দাম নিয়ে কথা
বলতে গেল। তাঁকে মাওবাদী বলে গ্রেফতার করা হল। অথচ সোমবার দিল্লিতে ওই সারের দাম নিয়েই ধর্নায় বসছে তৃণমূল! আসলে ওরা চাষিদের সঙ্গে নেই।”
হুগলি জেলা কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ নাথের অভিযোগ, “অনিচ্ছুকদের নামের তালিকায় কারচুপি করে তাঁদের চাল-টাকা দেওয়া হচ্ছে। ওই তালিকা আমরা চেয়েও পাইনি বিডিও বিষ্ণু কবিরাজের কাছ থেকে।” বিষ্ণুবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক আর অ্যালিয়াস ভেজ। |