দুর্নীতি প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে টিম-অণ্ণা-র পথে নামাকে কেন্দ্র করে রবিবার কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দিল্লির রাজপথ। কিন্তু যে ভাবে এ দিন বিক্ষোভ দেখানো হল এবং তাতে সংগঠনের অন্যতম সদস্য কিরণ বেদী অনুপস্থিত থাকলেন, তাতে প্রশ্ন উঠে গেল টিম-অণ্ণার রণকৌশল নিয়েই।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর বাড়ির সামনে অণ্ণা-সমর্থকদের ভিড় হটাতে এ দিন প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। পরে লাঠিও চালায় পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে দু’দফায় আটক করা হয় টিম-অণ্ণার সদস্যদের। এ দিন মনমোহন ও সনিয়ার সঙ্গেই বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখায় টিম-অণ্ণা। কিন্তু এই কর্মসূচিতে ছিলেন না কিরণ বেদী। যদিও টিম-অণ্ণার অন্যতম সদস্য কেজরিওয়ালের কথায়, “কয়লা কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলেরই ভূমিকা। তাই দু’দলের নেতাদের বাড়ির সামনেই বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।”
পরিকল্পনা মতো আজ ভোরেই প্রতিবাদ জানাতে মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধীর বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যান অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ টিম-অণ্ণার সহযোগীরা। কিন্তু পথে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করায় আটক করা হয় কেজরিওয়াল, গোপাল রাই, কুমার বিশ্বাসদের। প্রায় এক ঘণ্টা মন্দির মার্গ পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখার পরে সকাল আটটা নাগাদ তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। |
গ্রেফতারির পর কেজরিওয়াল। ছবি: পি টি আই |
ছাড়া পাওয়ার পরে বিক্ষোভকারীরা এসে জমায়েত হন যন্তর মন্তরে। সেখানে ঠিক হয়, তিনটি দল ভিন্ন ভিন্ন পথে যথাক্রমে রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রী, জনপথে সনিয়া গাঁধী এবং তুঘলক রোডে নিতিন গডকড়ীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন।
পুলিশ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রীর বাড়ির অনেক আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে জলকামান, পরে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ফের আটক করা হয় অরবিন্দ-সহ টিম অণ্ণার সহযোগীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিও চালায় পুলিশ। টিম-অণ্ণার অভিযোগ, পুলিশের লাঠিতে তাঁদের অনেকেই গুরুতর ভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। পরে কেজরিওয়াল বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশবাসীকে বোঝানো, কংগ্রেস ও বিজেপি দুর্নীতিতে কী ভাবে যুক্ত। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।”
কেজরিওয়াল তাঁদের অভিযান সফল বলে দাবি করলেও এই বিক্ষোভের কৌশল ঘিরে টিম-অণ্ণার মধ্যে ফাটল স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কয়লা কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশাপাশি বিজেপি সভাপতির বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্তে আপত্তি ছিল কিরণ বেদীর। যা মানতে নারাজ কেজরিওয়াল। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসের পরিবর্তে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তা হলেও কি পরিস্থিতি বদলাবে?” কিরণের অবশ্য যুক্তি, “যখন বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন তাদের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানিয়ে কী লাভ?” কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, কিরণ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে দিল্লি থেকে ভোটে দাঁড়াতে চান। তাই আজকের কর্মসূচি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। কিরণ অবশ্য জানান, তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও কোনও বিরোধ নেই। |